🔥 রাজভবন নাকি ‘অস্ত্রাগার’? কল্যাণের বিস্ফোরক অভিযোগে তোলপাড়, পাল্টা তদন্ত চাইছে রাজ্যপাল ভবন

রাজভবন নাকি ‘অস্ত্রাগার’?

রাজ্যের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার ঝড়। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে সরাসরি আক্রমণ করে যে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছিলেন, তার প্রত্যুত্তরে রবিবার সকালেই রাজভবনের পক্ষ থেকে জারি হল তীব্র পাল্টা বিবৃতি। শুধু প্রতিবাদই নয়, অভিযোগের সার্বজনীন তদন্ত চেয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে রাজ্যপাল ভবন।

ঘটনার সূত্রপাত এসআইআর বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যপালের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। রাজ্যপাল বলেন, এসআইআর জরুরি এবং এটি নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করবে। আর সেই মন্তব্যকেই নিশানা করে কল্যাণ অভিযোগ তোলেন—
রাজ্যপাল নাকি বিজেপি-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের রাজভবনে আশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁদের অস্ত্র ও বোমা সরবরাহ করছেন, এবং তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলার নির্দেশ দিচ্ছেন।

এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজভবনের প্রতিক্রিয়া ঝড়ের গতিতে। বিবৃতিতে এই অভিযোগকে অভূতপূর্ব, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সঙ্গে জানানো হয়েছে, যদি অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়, তবে সাংসদ কল্যাণকে সমগ্র বাংলার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, এবং তাঁর ঘৃণাত্মক বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও হতে পারে।

🔍 ‘রাজভবন খুলে দিচ্ছি—এসে দেখুন অস্ত্র কোথায়!’

রাজভবন কর্তৃপক্ষ এ দিনের বিবৃতিতে ঘোষণা করে—
সাংসদ, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং সাংবাদিক মিলিয়ে ১০০ জন পর্যন্ত ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবিলম্বে রাজভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা খতিয়ে দেখতে পারেন—এখানে সত্যিই কোনও বোমা-বন্দুক মজুত আছে কি না।
এমনকি রাজভবন প্রশ্নও তোলে—
কলকাতা পুলিশের অনুমতি ছাড়া রাজভবন প্রাঙ্গণে অস্ত্র ঢোকানো সম্ভবই বা কী করে?
কারণ ভবনের নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে কলকাতা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়—এই অভিযোগ রাজ্যপালের জীবন ও রাজভবনের কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য আশঙ্কা তৈরি করছে। রাজ্যপালের নিরাপত্তা আধিকারিকেরা তাঁকে সাময়িক ভাবে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু রাজ্যপালের স্পষ্ট মত—
“আমি রাজভবন ছাড়ব না, যে-কিছু ঘটুক।”

এ ছাড়াও, যেহেতু অভিযোগকারী একজন লোকসভা সদস্য, তাই বিষয়টি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে পাঠানোর ভাবনাও রয়েছে।

🗳️ কল্যাণের অভিযোগ: কেন এত উত্তেজনা?

এসআইআর নিয়ে রাজ্যপালের সমর্থনমূলক বক্তব্যের পরেই কল্যাণ বলেন—
রাজভবনে বিজেপির অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, এবং রাজ্যপাল তাঁদের তৃণমূল কর্মীদের আক্রমণ করতে উসকানি দিচ্ছেন।

এই মন্তব্য তৃণমূলের দীর্ঘদিনের অভিযোগকেই আরও তীব্র করে—রাজ্যপাল নাকি বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। তবে তৃণমূলের অন্য নেতারা এখনও এই ইস্যুতে মুখ খোলেননি।

⚖️ দুই পক্ষের সংঘাতে উত্তাল রাজনীতি

এক দিকে শাসক দলের অভিজ্ঞ সাংসদের বিস্ফোরক অভিযোগ, অন্যদিকে রাজভবনের অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া—
দুই পক্ষের টানাপোড়েনে রাজ্য রাজনীতি আরও তপ্ত হয়ে উঠেছে।

রাজভবন জানিয়েছে—
“অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হলে, এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক পদমর্যাদাকে অপমান করার শামিল।”

অন্য দিকে রাজনৈতিক মহলের মত—
এসআইআরকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্ক যে নতুন দফায় সংঘাতে ঢুকে পড়েছে, এই ঘটনাই তার স্পষ্ট প্রমাণ।