মৃত্যুদণ্ডের দোরগোড়ায় হাসিনা!
বাংলাদেশের রাজনীতি সোমবার পৌঁছতে চলেছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণা করবেন সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। নাটকীয়তার শীর্ষবিন্দুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশের আইনব্যবস্থা, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ। রায়ের সরাসরি সম্প্রচার হওয়ার কথা—যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে উত্তেজনা।
ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—রাষ্ট্রপক্ষ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। তবে বড় প্রশ্ন হল, রায় যা-ই হোক, তার বিরুদ্ধে কি কোনও আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন হাসিনা?
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে—না, পারবেন না। কেন? তারই ব্যাখ্যা দিলেন আইনজীবীরা।
কারা অভিযুক্ত? কে বা কারা রাজসাক্ষী?
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় মোট তিনজন অভিযুক্ত—
- শেখ হাসিনা (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী)
- আসাদুজ্জামান খান (প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)
- চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুন (বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি)
হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান—দু’জনই পলাতক, এবং দু’জনেরই ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়ার খবর মিলেছে।
তবে তৃতীয় অভিযুক্ত আল-মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে তিনি রাজসাক্ষী হতে সম্মত হন এবং আদালতে বিস্ফোরক জবানবন্দি দেন। আদালতে তাঁর স্বীকারোক্তিই রাষ্ট্রপক্ষের মামলার সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।
হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি প্রধান অভিযোগ
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, ২০২৪ সালের ছাত্র-যুব আন্দোলনের সময় যা ঘটেছে, তার প্রত্যেকটির মূল নির্দেশদাতা ছিলেন হাসিনা। অভিযোগগুলি একে একে—
১. গণআন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ
বাংলাদেশজুড়ে সরকারের বিরুদ্ধে যে ছাত্র-যুব বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলন দমন করতে পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ হাসিনাই দিয়েছিলেন—এমনটাই দাবি রাষ্ট্রপক্ষের।
২. হেলিকপ্টার ও ড্রোন থেকে হামলা
বিক্ষোভকারীদের উপর হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং ভারী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল—যার জেরে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি।
৩. রংপুরের ছাত্র আবু সাঈদের হত্যার নির্দেশ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি নির্দেশদাতা হিসেবে নাম উঠেছে হাসিনার।
৪. ছয় প্রতিবাদীর হত্যার অভিযোগ (চানখাঁরপুল, ঢাকা)
ঢাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। অভিযোগ—এই নির্দেশও দিয়েছেন হাসিনা।
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা
গণআন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, হামলাটি সরকারি নির্দেশেই হয়েছিল।
কেন আপিল করতে পারবেন না হাসিনা?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাজি মোনাওয়ার জানালেন—
হাসিনা যেহেতু পলাতক, তাই আইনত তাঁর আপিল করার অধিকার নেই।
আইনি নিয়ম অনুযায়ী—
- ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়,
- কিন্তু আপিল করতে গেলে অভিযুক্তকে
- আত্মসমর্পণ করতে হবে, অথবা
- পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে হবে।
হাসিনা বর্তমানে দেশে নেই, পলাতক। ফলে তিনি কোনও ভাবেই আপিলের সুযোগ পাবেন না।
মোনাওয়ার আরও জানিয়েছেন—
গণমাধ্যমে দেওয়া হাসিনার বক্তব্য আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়।
কারণ—তিনি সশরীরে হাজির হননি,
এবং তাঁর কণ্ঠস্বরের রেকর্ড আদালতে বাজানো হলেও, পলাতক অবস্থায় এটি বৈধ প্রতিরক্ষা হিসেবে ধরা যাবে না।
শেষ কথায়
একের পর এক অভিযোগ, রাজসাক্ষীর জবানবন্দি এবং রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতে হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ।
রায়ের আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ।
একদিকে রাষ্ট্রপক্ষের মৃত্যুদণ্ড দাবি, অন্যদিকে অভিযুক্তের পলাতক অবস্থা—সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে অন্যতম নাটকীয় রায় ঘোষণা হতে চলেছে সোমবার।

