🔥 ‘রামমোহনকে দালাল’ মন্তব্যে ঝড়! ভোটের আগে বিপাকে বঙ্গ-বিজেপি, দিল্লির ধমকে ক্ষমা চাইলেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী

‘রামমোহনকে দালাল’ মন্তব্যে ঝড়!

বাংলার নবজাগরণের পুরোধা রাজা রামমোহন রায়কে নিয়ে মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি মন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ভোটের আগে যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ‘বাংলা ও বাঙালি অস্মিতা’কে সামনে রেখে আক্রমণ শানাচ্ছে, তার মাঝেই এই মন্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢালার সমান। ফলে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ-বিজেপি। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কড়া হস্তক্ষেপে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন ওই মন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার।

‘দালাল’ মন্তব্যে ক্ষোভ উসকে দিল বিরোধীরা

বিরসা মুন্ডার সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়ে পারমার দাবি করেছিলেন, ব্রিটিশরা ইংরেজি শিক্ষার নামে সাধারণ মানুষের মন পরিবর্তন করতে একটি বিশেষ গোষ্ঠী তৈরি করেছিল এবং রামমোহন রায় ছিলেন সেই ‘চক্র’-এর সদস্য। আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, রামমোহন ছিলেন ‘ব্রিটিশদের দালাল’।

তার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূল। বাঙালির আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আঘাত বলে ব্যাখ্যা করে বিজেপিকে ‘বাঙালি-বিরোধী’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করে রাজ্যের শাসকদল। রামমোহন যিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধ থেকে শুরু করে আধুনিক শিক্ষা ও যুক্তিবাদের প্রচারে পথপ্রদর্শক— তাঁর সম্পর্কে এমন মন্তব্যকে তৃণমূল ‘অশালীন’ এবং ‘ইতিহাস-বিরোধী’ বলে আক্রমণ করতে ছাড়েনি।

চাপে বঙ্গ-বিজেপি, মুখ খুললেন শমীক ভট্টাচার্য

প্রথমে রাজ্য বিজেপির কেউই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে বিতর্ক বাড়তে থাকায় অবশেষে বিবৃতি দেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তিনি স্পষ্ট বলেন,
“মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এর নিন্দা করছি।”

তবে একই সঙ্গে তিনি তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, “বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এটি দুর্ভাগ্যজনক।”

দিল্লির চাপেই ক্ষমা চাইলেন মন্ত্রী

বিজেপি সূত্রের দাবি, ইন্দর সিংহ পারমারের মন্তব্য দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে খুবই বিব্রত করেছে। বাংলায় ভোটের আগুনে ঘি ঢালার মতো এই মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে বুঝেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৎক্ষণাৎ হস্তক্ষেপ করে।

এর পরই পারমার ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে বলেন—
“ভুলবশত আমার মুখ ফসকে গিয়েছে। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন মহৎ সমাজ সংস্কারক। আমার মন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।”

তৃণমূলের পাল্টা বার্তা: ‘এটাই বিজেপির আসল চরিত্র’

তৃণমূল দাবি করেছে—
“এটাই প্রমাণ করে বিজেপির বাঙালি বিরোধী মানসিকতা। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর এখন রামমোহনকে দালাল বলা হচ্ছে।”

তারা আরও অভিযোগ করে যে বিজেপি বরাবরই বাংলার মনীষীদের অপমান করে এসেছে— বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ— বারবার ভুল বক্তব্য দিয়েছেন বিজেপি নেতারা।

বিজেপির কটাক্ষ: ইতিহাস ভুলে গিয়েছে তৃণমূল

শমীক ভট্টাচার্যের দাবি,
“যারা অতীতে বিদ্যাসাগরকে ‘ব্রিটিশ দালাল’ বলেছিল, তারা আজ তৃণমূলের অংশ। তাই তৃণমূলের কথায় বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।”

ভোটের আগে রাজনীতিতে বাড়তি উত্তাপ

তৃণমূল আগেই ‘বাঙালি গরিমা’কে হাতিয়ার করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হামলা, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, প্রকল্পে অর্থ না পাওয়া— সব মিলিয়ে কেন্দ্র-বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তৈরি করেছে ঘাসফুল শিবির।

তার উপর রামমোহনকে ‘দালাল’ বলা যেন তৃণমূলের হাতে আরও একটি ‘জোরালো অস্ত্র’ তুলে দিল। অনেকের মতে, ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক তৃণমূলের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।