‘রোস্ট’ হোক হাসির, অপমান নয়!
বছরের পর বছর ট্রোলিং, কটাক্ষ, সোশ্যাল মিডিয়ার খোঁচা— সবকিছুই আজ আর গায়ক-অভিনেতা শিলাজিৎ মজুমদারের মনে আগের মতো দাগ কাটে না। খোলামেলা, তীক্ষ্ণ রসিকতায় ভরা তাঁর ব্যক্তিত্ব যেমন অনেককে হাসায়, তেমনই কখনও কখনও উস্কেও দেয় বিতর্ক। আর এখন তিনি তৈরি হচ্ছেন সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতার জন্য— সামনে বসে নিজেকে ‘রোস্ট’ হতে দেখার!
এক বিশেষ অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ড-আপ কৌতুকশিল্পীরা তাঁকে কেন্দ্র করেই একের পর এক ‘রোস্ট’ করবেন। অনেকের পক্ষেই নিজের সম্পর্কে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সহ্য করা সহজ নয়। কিন্তু শিলাজিৎ বলছেন, “বিনোদনের মোড়কে রোস্ট হলে সেটা মজা। সেটা যন্ত্রণাদায়ক নয়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা নিজের মুখ লুকিয়ে মানুষকে ছোট করে— ওসব আমার কাছে এখন একেবারেই গা-সওয়া।”
তিনি মনে করেন, আগের দিনের সমাজে ‘মোটা’, ‘বেঁটে’, ‘টেকো’— এ রকম ডাকে কেউ খুব চমকে উঠতেন না। ছোটবেলায় ভুঁড়ি থাকার কারণে তাঁকেও ডাকনাম পড়েছিল। তাতে কষ্ট পেলেও বড় ক্ষত তৈরি হয়নি কখনও। কিন্তু আজকের দিনে শারীরিক গঠনের ভিত্তিতে অপমান বরদাস্ত করা যায় না— এমনটাই তাঁর অবস্থান। তাঁর কথায়, “বন্ধুকে ঠাট্টায় মোটু বলা যায়। কিন্তু ইচ্ছে করে কাউকে ছোট করা? সেটা অসম্মান।”
গায়ক মানেন, রোস্ট ও বুলিংয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক আছে। নিজের রসিকতা বা মন্তব্য নিয়ে কখনও অনুশোচনা হয়েছে কি? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কখনও শিল্পীর পারিশ্রমিক কমাতে কেউ যখন অকারণে জুলুম দেখায়, তখন রাগে কিছু বলে ফেলি। পরে ভাবি বলা উচিত হয়নি। কারণ এঁদের বলার কোনও লাভ নেই।”
শিলাজিতের মতে, গানের মাধ্যমেও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ হতে পারে। তাঁর গান ‘হুলিগানিজ়ম’ বেশ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে লক্ষ্য করে লেখা হয়েছিল। এতে বিতর্ক হলেও তিনি মনে করেন, “ওরা ঠিক করেছে। জনপ্রিয় নাম ব্যবহার করলে মানুষ দ্রুত নজর দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর নাম বললেও জনপ্রিয়তা বাড়ে। নেতামন্ত্রীদের নাম দিয়ে আলোচনায় ওঠা খুব সহজ।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ মানুষও একই পথ অনুসরণ করেন— মনে করেন তিনি। কোনও নামী মানুষকে আক্রমণ করলে মুহূর্তে আলোচনায় আসা যায়। তাঁর কথায়, “কিছু মানুষ নিজেদের অতি বিজ্ঞ ভাবেন। মঞ্চ থেকে একজন দর্শককে কটুক্তি করছেন— তাও তিনি স্ট্যামার করেন বলে! এটা আমি সহ্য করতে পারি না।”
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার প্রসঙ্গে শিলাজিৎ খুবই দৃঢ়। তাঁর মতে, ব্যঙ্গ যদি করা হয়, তা সম্মতি নিয়ে করা উচিত। অতি সংবেদনশীল মানুষকে আঘাত করলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে। নিজের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমাকে রোস্ট করার জন্য আমি পারিশ্রমিক নিচ্ছি। এখানে সম্মতি আছে। কিন্তু রাস্তায় বা অনলাইনে যে কাউকে অপমান করা ঠিক নয়।”
বন্ধুদের পরিসরে গালিগালাজ মজা হতে পারে, কিন্তু তার আক্ষরিক অর্থ কেউ বোঝে না— এও উল্লেখ করেন তিনি। এতে কোনও বৈরিতা নয়, বরং সম্পর্কের খোলামেলা জায়গাটাই প্রকাশ পায়।
শেষে তিনি হাসতে হাসতেই বলেন, “বাবাও তো আমাকে অপমান করতেন! ভূগোল পরীক্ষায় ফেল করলে সবাইকে বলতেন।” তাঁর মতে, অপমানের সীমা আছে, এবং তা বুঝে আচরণ করাই সভ্যতার পরিচয়।

