Sunday, November 30, 2025

ডিজিটাল যুগে বইয়ের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে! খুদেদের পড়ার অভ্যাস ফেরাতে এই ৫টি কৌশল অব্যর্থ

Share

ডিজিটাল যুগে বইয়ের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে!

ডিজিটাল যুগ আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে ছোটদের জীবন থেকেও অনেক মূল্যবান অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম — বই পড়ার অভ্যাস। মোবাইল, ট্যাব, টেলিভিশন কিংবা ইউটিউবের পর্দায় ঘুরে বেড়ানো বাচ্চারা এখন আর গল্পের বই হাতে নিতে চায় না। অথচ এই বই পড়ার অভ্যাসই তাদের কল্পনাশক্তি, চিন্তাভাবনা ও মনোসংযোগ বাড়াতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।

তবে বাবা-মা একটু সচেতন হলেই এই প্রবণতা বদলানো সম্ভব। শিশুরা জন্মগতভাবে কৌতূহলী — শুধু তাদের আগ্রহটাকে সঠিক পথে ফেরানো দরকার। জানুন, খুদেদের মধ্যে বই পড়ার ভালোবাসা গড়ে তুলতে পারে এমন ৫টি কার্যকর অভ্যাস।


১. প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিটের ‘রিডিং টাইম’ তৈরি করুন

দিনের মধ্যে মাত্র ১০ মিনিটের পড়ার অভ্যাস একটি শিশুর মন ও চরিত্রে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনতে পারে। বাবা-মা যদি রাতে ঘুমানোর আগে বা স্কুলের পর একসঙ্গে বই পড়েন, তাহলে সেটা শিশুদের কাছে আনন্দের সময় হয়ে উঠবে।
গল্প শোনা ছোটদের জন্য খুব উপভোগ্য হয়, আর সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তারা নিজেরাও বই হাতে নিতে শুরু করে।
একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন—যেমন “গল্পের ১০ মিনিট”—এতে বই পড়া তাদের রুটিনের অংশ হয়ে যাবে।


২. বই পড়ার জন্য তৈরি করুন মনোরম পরিবেশ

শুধু বই হাতে দিলেই চলবে না, পড়ার জন্য প্রয়োজন একটা নিরিবিলি, আরামদায়ক পরিবেশ।
যদি আলাদা পড়ার ঘর থাকে, সেটিকে সুন্দর আলো, রঙিন বুকশেলফ আর নানা ধরনের বই দিয়ে সাজান।
না থাকলে, ঘরের এক কোণে একটি ছোট ‘রিডিং কর্নার’ বানিয়ে দিন—একটা আরামদায়ক চেয়ার, একটা ছোট বাতি আর কিছু প্রিয় বই।
মন ভালো থাকলে, পড়ার ইচ্ছাও জাগবে। শিশুরা যখন দেখে, বাড়িতে বইকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তখন তারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বইয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে।


৩. নিজের পছন্দের বই বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিন

অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মা জোর করে এমন বই পড়তে বলেন যা শিশুর বয়স বা আগ্রহের সঙ্গে মানানসই নয়।
ফলত, বই তাদের কাছে ‘বাধ্যবাধকতা’ হয়ে দাঁড়ায়, আনন্দ নয়।
তাই শিশুকে নিজের পছন্দের বই বেছে নিতে দিন—তা কমিক হোক, কিশোর অভিযান হোক বা রূপকথার গল্প।
যখন তারা নিজেরাই বই বেছে নেয়, তখন পড়ার সঙ্গে তাদের আত্মিক যোগ তৈরি হয়, আর সেই যোগই দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাসে রূপ নেয়।


৪. গল্পে যোগ করুন অভিনয় ও মজা

গল্প পড়াকে আরও আকর্ষণীয় করতে পারেন একটু অভিনয়ের ছোঁয়া দিয়ে।
পাঠের সময় চরিত্রগুলির কণ্ঠস্বর নকল করা, নাটকীয় ভঙ্গিতে কথা বলা বা ঘটনাগুলিকে অভিনয়ের মতো করে দেখালে শিশুরা মুগ্ধ হয়।
এই ধরনের গল্পবলার অভ্যাস শুধু বইয়ের প্রতি আগ্রহই বাড়ায় না, বরং শিশুর বাকশৈলী ও কল্পনাশক্তির বিকাশেও সাহায্য করে।
পাঠকে খেলার অংশ করে তুলুন—তাহলেই বই হয়ে উঠবে তাদের সেরা বন্ধু।


৫. ছোট ছোট অর্জন উদ্‌যাপন করুন

একটি অধ্যায় শেষ করলে বা কয়েক পৃষ্ঠা পড়লে, শিশুকে ছোট পুরস্কার দিন
যেমন—একটি সুন্দর বুকমার্ক, নতুন গল্পের বইয়ের পরামর্শ, বা তার পছন্দের খাবার।
এতে তাদের মনে বই পড়ার প্রতি ইতিবাচক প্রেরণা তৈরি হয়।
পরে, তার কাছ থেকে গল্পের সারমর্ম বা মতামত জানতে চাইলে তারা আরও মনোযোগ দিয়ে পড়বে।


শেষ কথা

বই পড়া শুধু তথ্য অর্জনের উপায় নয়—এটি মনের বিকাশ, চিন্তার প্রসার ও আবেগের পরিপূর্ণতা আনে।
ডিজিটাল যুগে খুদেদের হাতে বই তুলে দেওয়া মানে তাদের কল্পনার দরজা খুলে দেওয়া।
তাই প্রতিদিনের জীবনে কিছুটা সময় গল্পের জন্য রাখুন—কারণ, যে শিশু আজ বই পড়ে, সে-ই আগামী দিনে ভাবতে শিখবে, বুঝতে শিখবে, এবং বড় স্বপ্ন দেখতে পারবে। 📚✨

Read more

Local News