ফরিদাবাদ থেকে দিল্লি!
দিল্লির লালকেল্লার সামনে হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের নেপথ্যে কি ফরিদাবাদের বিস্ফোরক চক্রই? তদন্তের অগ্রগতিতে এমনই ইঙ্গিত মিলছে। এক মহিলা চিকিৎসক শাহিন শহিদ-এর জেরায় উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য — দুই বছর ধরে দেশে বিস্ফোরক সংগ্রহ, নাশকতার ছক, এমনকি একাধিক হামলার পরিকল্পনার কথাও।
ফরিদাবাদে ৩৬০ কেজি আরডিএক্স তৈরির উপাদান অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই তৎপর হয়েছে তদন্ত সংস্থা। এখন প্রশ্ন, সেই বিস্ফোরকই কি দিল্লি বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছিল?
চিকিৎসক থেকে অভিযুক্ত — কে এই শাহিন শহিদ?
শাহিনের বাড়ি লখনউ, কিন্তু কর্মসূত্রে তিনি থাকতেন ফরিদাবাদে। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, এবং কাজ করতেন আল-ফালাহ্ মেডিক্যাল কলেজে।
সহকর্মীদের কথায়, শান্ত-স্বভাবের এই মহিলা কোনও দিনই সন্দেহজনক কিছু করেননি। তবে কিছুটা অদ্ভুত আচরণ করতেন — হঠাৎ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যেতেন।
হাসপাতালের এক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন,
“তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ছিল ঠিকই, কিন্তু তিনি কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন — তা কেউ ভাবতেও পারেনি।”
দুই বছর ধরে বিস্ফোরক জোগাড়ের পরিকল্পনা
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, শাহিনের জেরায় উঠে এসেছে বিস্ফোরক সংগ্রহের দীর্ঘ পরিকল্পনার কথা।
তিনি স্বীকার করেছেন, আদিল মাজিদ রাথর, মুজাম্মিল আহমেদ, এবং এক চিকিৎসক উমর উন নবি-র সঙ্গে মিলেই দুই বছর ধরে দেশে বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রস্তুতি চলছিল।
এই চারজন — শাহিন, আদিল, মুজাম্মিল ও উমর — সকলেই চিকিৎসক। তাঁদের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল আল-ফালাহ্ মেডিক্যাল কলেজ।
জেরায় শাহিন জানান,
“হাসপাতালের কাজ শেষে প্রায়ই উমরের সঙ্গে দেখা হত। তখনই তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতেন।”
উমর উন নবি — মূল মাথা?
উমর উন নবিকেই এখন তদন্তকারীরা এই চক্রের মস্তিষ্ক হিসেবে সন্দেহ করছেন।
লালকেল্লার বিস্ফোরণের সময় যে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, সেই গাড়ি চালাতে দেখা গেছে একজনকে — সিসিটিভি ফুটেজে সেই ব্যক্তিকে উমর বলে মনে করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেও তাঁকেই গাড়ি চালাতে দেখা যায়। তিনি আদিল ও মুজাম্মিলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে শাহিন জানিয়েছেন।
তদন্তকারীদের অনুমান, দিল্লি বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বিস্ফোরক ফরিদাবাদ থেকেই সরবরাহ করা হয়েছিল। কারণ, ফরিদাবাদের মুজাম্মিলের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে বিশাল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।
‘দৈনিক ভাস্কর’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিস্ফোরণের পর দেখা গিয়েছিল কমলা রঙের আগুন, যা সাধারণত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণের বৈশিষ্ট্য।
নাশকতার ছক ও আন্তর্জাতিক যোগ
তদন্তে জানা গিয়েছে, এই চক্রটি শুধু ফরিদাবাদে সীমাবদ্ধ ছিল না।
কাশ্মীরে গত ১৯ অক্টোবর জইশ-ই-মহম্মদ সমর্থনে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে গ্রেফতার আদিল মাজিদ রাথরের সূত্রেই এই মডিউলের খোঁজ মেলে।
পুলিশের এক সূত্র জানায়,
“এই গোষ্ঠী সমাজসেবার আড়ালে কাজ করত, কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল দেশে একাধিক নাশকতা চালানো।”
শাহিনের জেরায় আরও উঠে এসেছে এক নাম — পারভেজ সইদ, যিনি তাঁর ভাই। তাঁরও আদিল ও মুজাম্মিলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
তদন্তকারীরা এখন এই যোগাযোগ সূত্র ধরে জইশের আন্তর্জাতিক জালের খোঁজে নেমেছেন।
তদন্তের বর্তমান অবস্থা
ফরিদাবাদ ও দিল্লির সংযোগ এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু।
লালকেল্লা বিস্ফোরণ ও বিস্ফোরক জব্দ — দুই ঘটনার নেপথ্যে একই মডিউল কাজ করেছে কি না, তা জানতে
- সিসিটিভি ফুটেজ,
- মোবাইল কল রেকর্ড,
- এবং ডিজিটাল লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তদন্তকারী সংস্থার এক সদস্য বলেন,
“এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অন্তত দুই বছর ধরে দেশজুড়ে এক বৃহত্তর জাল ছড়ানো হয়েছে। শাহিনের জেরায় সেই জালের দিকেই ইঙ্গিত মিলছে।”
শেষ কথা
চিকিৎসার পেশার আড়ালে গড়ে ওঠা এমন নাশকতা চক্র এখন গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
দুই বছর ধরে গোপনে বিস্ফোরক মজুত রাখা, চিকিৎসকদের যুক্ততা, আর রাজধানীতে হামলার আশঙ্কা — সব মিলিয়ে দিল্লি বিস্ফোরণ এখন দেশের নিরাপত্তা ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর অধ্যায় হয়ে উঠছে।

