দুষ্টু–মিষ্টি রাইমা
রাইমা সেন— নামটা শুনলেই মনে পড়ে এক ঝলমলে হাসি, দুষ্টু চোখ আর এক অপরিমেয় আন্তরিকতা। যতটা মিষ্টি, ততটাই দুষ্টু— এই দুটো শব্দ যেন মিলেমিশে রাইমার নামের পাশে স্থায়ীভাবে বসে আছে। আর এমন মোহনীয় এক অভিনেত্রীর অসংখ্য পুরুষ ভক্ত থাকবে, সেটাই তো স্বাভাবিক!
সম্প্রতি পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী স্মৃতির ঝাঁপি খুলে জানান, তাঁর জীবনে রাইমা সেন এসেছিলেন মাত্র একটি ছবির নায়িকা হয়ে— ‘অনুরণন’। কিন্তু সেই একটি ছবিই তাঁদের বন্ধুত্বকে বছর বছর ধরে আরও দৃঢ় করেছে। তাঁর আক্ষেপ, ইচ্ছে ছিল আরও অনেক ছবিতে রাইমাকে কাস্ট করার, কিন্তু তিনি কাজ করেন ধীরে–স্থিরে, নিজের গতিতে। তাই ১২–১৩টা ছবি বানানো তাঁর জন্য কোনওদিনই সহজ ছিল না।
৭ নভেম্বর, দুই বাঙালি অভিনেত্রী— ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং রাইমা সেন— দুজনেরই জন্মদিন। অনিরুদ্ধর ‘অনুরণন’-এ দু’জনেই ছিলেন, আর এই ছবিই যেন তাঁকে সেন পরিবারে প্রবেশের ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছিল।
সবচেয়ে আবেগী যে স্মৃতি তিনি শেয়ার করেন, তা রাইমার কিংবদন্তি দিদিমা মহানায়িকা সুচিত্রা সেন-কে নিয়ে। রাইমার মুখেই তিনি শুনেছিলেন, দিদিমা ‘অনুরণন’ দেখে বলেছিলেন—
“অনিরুদ্ধ যদি কোনও দিন ডাকে, না করবি না। দরকার হলে পয়সা না নিয়ে কাজ করবি।”
আর রাইমা, দিদিমার সেই কথাই অক্ষরে অক্ষরে রেখেছিল।
সেটা শুধু অভিনয়ের প্রতিশ্রুতি নয়, বন্ধুত্বেরও। ‘বুনো হাঁস’ ছবির শুটিংয়ের আগের রাতে ভীষণ অসুস্থ ছিলেন রাইমা। বারবার বমি, শরীর ভেঙে পড়ছে— তবু শুটিংয়ের দিন রাত জেগে কাজ করেছেন, ধুলোধোঁয়ার সেটেও একটিবার মুখ ভার করেননি।
কারণ, বন্ধুত্বের জন্যই সব করতে পারে সে।
শুধু সেটে নয়, বাস্তব জীবনেও ততটাই নিবেদিত। অনিরুদ্ধ জানান, তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ়ের জন্য রাইমা নাকি সারা রাত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল— যেন সেটা সফল হয়। কতজন সহকর্মী এই ভালোবাসা বা আন্তরিকতা দেখাতে পারেন?
তবে রাইমা শুধু ভালো মনের মানুষ নয়, তিনি মিষ্টির আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক দুষ্টু বিস্ফোরণও!
একবার অনিরুদ্ধকে এক জায়গায় নাম করে ডেকে পাঠালেন— গিয়ে দেখেন, তাঁর এক বন্ধু নতুন প্রেমিকার সঙ্গে রোমান্টিক মুহূর্তে ব্যস্ত! অস্বস্তিতে পড়ে যখন তিনি রাইমাকে ফোন করেন, ওপাশে তখন হাসির ফোয়ারা! শেষে তিনিও হাসতে বাধ্য হন। এমন স্মৃতিই তো বন্ধুত্বকে বাস্তব, জীবন্ত করে তোলে।
রাইমার ব্যক্তিত্ব একটা দারুণ মিশেল— সেন পরিবারের রাজকীয় সংবেদনশীলতা, মা মুনমুন সেন ও বাবা ভরত দেববর্মনের উদার মানসিকতা, আর সাথে নিজের শিশুসুলভ দুষ্টুমি, খাঁটি আবেগ আর সরলতা।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে— কবে বিয়ে করছেন রাইমা? অনিরুদ্ধ বলেন, “বিয়ে কি করতেই হবে? চাই শুধু ও ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।” বন্ধুর এই নিখাদ শুভকামনাই প্রকৃত স্নেহ।
আর সবশেষে এক চমক—
রাইমার নরম, মিষ্টি, নিষ্পাপ মুখ… যদি একদিন সেই মুখেই দেখা যায় এক সিরিয়াল কিলারের রোমহর্ষক ছায়া, তাহলে কেমন লাগবে? কনট্রাস্টে ভরা এমন চরিত্র হয়তো পর্দায় এনে দিতে পারে রাইমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সাহসী মোড়।
মিস্টি হাসির আড়ালে কি লুকিয়ে আছে সেই ‘ডার্ক হর্স’?
দর্শকই বলবে— ‘হ্যাঁ, আমরা এমন রাইমাকেই দেখতে চাই!’

