মেয়েদের ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে ক্রিকেট ছাপিয়ে রাজনীতির গন্ধ!
সেপ্টেম্বরে টানা তিনটি রবিবার পুরুষ দলের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। আর অক্টোবরের প্রথম রবিবারেই আবার সেই চিরচেনা দ্বৈরথ, তবে এ বার লড়াইয়ের ময়দানে নামছে মেয়েরা। এক দিনের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। মাঠের লড়াই যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার বাইরেও রাজনীতির গন্ধ যে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে আগেভাগেই।
পুরুষদের এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকেই শুরু হয়েছিল বিতর্কের আগুন। প্রতিযোগিতা জিতেও ভারত ট্রফি নেয়নি, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মন্তব্য ও উচ্ছ্বাস ঘিরে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল। ভারতীয় ক্রিকেটাররাও তিনটি ম্যাচে করমর্দন করেননি, আর ফাইনালে ট্রফি নিতে অস্বীকার করেছিলেন এসিসি চেয়ারম্যান মহসিন নকভির হাত থেকে, যিনি পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী। এই প্রেক্ষাপটে রবিবার মেয়েদের ম্যাচেও করমর্দন এড়িয়ে যাওয়া বা রাজনৈতিক উত্তাপ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারত এবং পাকিস্তান মোট ২৭ বার মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে ২৪ বার জিতেছে ভারত। এক দিনের ক্রিকেটে আরও স্পষ্ট ব্যবধান — পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা ১১টি ম্যাচেই জয় পেয়েছে ভারত। পাকিস্তানের তিনটি জয় এসেছে কেবল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
পাকিস্তানের জন্য আরও চিন্তার বিষয় তাদের বর্তমান দল। অভিজ্ঞদের জায়গায় নেতৃত্বের দায়িত্ব পড়েছে ২২ বছরের ফতিমা সানার হাতে। যোগ্যতা অর্জন পর্বে সব ম্যাচ জিতলেও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তারা হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। দলের কোনও বিভাগ নিয়েই তারা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না।
অন্যদিকে, হরমনপ্রীত কউরের নেতৃত্বে ভারত শুরু করেছে তুলনামূলক ভাল অবস্থান থেকে। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক সময় ১২৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও লোয়ার অর্ডারের দাপটে দল পেরিয়েছে আড়াইশোর গণ্ডি। ব্যাটিং লাইনআপের এই গভীরতাই ভারতের অন্যতম শক্তি। বর্তমানে রান রেটের বিচারে ভারত চতুর্থ স্থানে রয়েছে, আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে জিতেই সেই অবস্থান আরও মজবুত করার লক্ষ্য তাদের।
কলম্বোর পিচে আগের ম্যাচে দেখা গিয়েছিল পেসারদের জন্য বাড়তি সাহায্য। তাই ক্রান্তি গৌড় ও রেণুকা সিংহদের বল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। রেণুকা চোট সারিয়ে ফিরেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর মাঠে নামার সম্ভাবনাও প্রবল। তবে শুক্রবারের অনুশীলনে তাঁকে খুব একটা ছন্দে দেখা যায়নি।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তাদের ব্যাটিং। প্রথম ম্যাচে একের পর এক উইকেট হারিয়ে তারা কোনও জুটি গড়তে পারেনি। ফতিমা ও ডায়ানা বেগ ছাড়া বোলিংয়েও ধার দেখা যায়নি। কম রান রক্ষা করার মতো শক্তিও নেই। তাদের একমাত্র সুবিধা, একই মাঠে খেলে ফেলার অভিজ্ঞতা। কলম্বোয় দীর্ঘদিন ধরে ভারত কোনও ম্যাচ খেলেনি, তাই সেই অভিজ্ঞতা পাকিস্তানের পক্ষে সামান্য বাড়তি সুবিধা হতে পারে।
রাজনীতির ছায়া যেন আরও গাঢ়। ২০২২ বিশ্বকাপের পরে পাকিস্তানের অধিনায়ক বিসমাহ মারুফের কন্যার সঙ্গে খেলা করতে দেখা গিয়েছিল স্মৃতি, দীপ্তি ও হরমনপ্রীতকে। ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়রা একসঙ্গে গল্পও করেছেন। কিন্তু এ বার এমন সৌহার্দ্যের দৃশ্য দেখা যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তার উপর রয়েছে আবহাওয়ার ভ্রুকুটি। শনিবার কলম্বোয় অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছে। রবিবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। খেলা পুরোপুরি বাতিল না হলেও, ম্যাচের মাঝে বৃষ্টি এসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
সব মিলিয়ে, রবিবারের ভারত-পাকিস্তান মেয়েদের দ্বৈরথ শুধু মাঠের লড়াই নয় — এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনীতি, ইতিহাস, আবেগ এবং প্রকৃতির অনিশ্চয়তাও।
কষা মাংসের রান্নায় পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখে জল? জানুন ৫ কার্যকরী টোটকা

