Monday, December 1, 2025

বিদেশি ঋণের নতুন সীমা: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাপ বাড়ল কীভাবে?

Share

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাপ বাড়ল কীভাবে?

বাংলাদেশের জন্য বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে নতুন সীমা ঠিক করে দিল আন্তর্জাতিক অর্থমন্ত্রক, অর্থাৎ আইএমএফ। চলতি অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) দেশটি সর্বোচ্চ ৮৪৪ কোটি ডলার (প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা) ঋণ বিদেশ থেকে নিতে পারবে। এর আগে এমন কোনও সীমা ধার্য ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হল বহিরাগত ঋণের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা। তবে এতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপও বাড়েছে।

আইএমএফ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৫৫০ কোটি ডলার (প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন করেছিল। চলতি বছরের জুনে তার চতুর্থ এবং পঞ্চম কিস্তি পুনর্মূল্যায়নের সময় নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে, চলতি অর্থবর্ষে ঢাকা সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে। প্রথম ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার কোটি এবং প্রথম অর্ধে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার অনুমতি থাকবে। প্রতি ত্রৈমাসিকে ঋণের খাতায় আইএমএফ কড়া নজর রাখছে।

আইএমএফ-এর মূল অনুমোদন ২০২৩ সালে আসে। গত জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য অনুমোদন মিলেছে এবং ঋণের মেয়াদও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। তবে নতুন শর্তটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে ঋণ স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩ ও ২০২৪ অর্থবর্ষে বাংলাদেশকে ‘মাঝারি ঝুঁকি’ দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে, যেখানে আগে এটি ছিল ‘কম ঝুঁকি’র মধ্যে। আয়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধে ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে এই র‌্যাংকিং নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মোট বহিরাগত ঋণ এখনও আইএমএফ নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়েছে। তাই সতর্কতামূলক এই পদক্ষেপ।”

অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর রাজনৈতিক পরিস্থিতিও প্রভাব ফেলেছে। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট গণবিক্ষোভের ফলে শেখ হাসিনার সরকার পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় এবং তিনি ভারতে চলে আসেন। ৮ অগাস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যা সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদেশি ঋণের সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ আরও বেড়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এই সীমা মানা না হলে দেশের ঋণগ্রহণের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। অর্থাৎ, ঢাকার ওপর নতুন অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব এসেছে—বহিরাগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা। এই বাস্তবতা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের জন্য এই নতুন সীমা শুধু সংখ্যাতীত ঋণের হিসাব নয়; এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক আস্থা ধরে রাখার একটি পরীক্ষা। চলতি অর্থবর্ষে দেশের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক ঋণ গ্রহণের ভারসাম্য কেমন রাখে, তা নজরে রাখছে বিশ্লেষকরা।

ব্যালকনির উপর উড়ালপুল! নাগপুরের সেতু স্মরণ করাচ্ছে ভোপালের ৯০ ডিগ্রি রেলসেতুর ঘটনার কথা

Read more

Local News