চন্দ্রভাগায় বাঁধ নির্মাণে আরও তৎপর ভারত, শীঘ্রই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
পাকিস্তানের একের পর এক হুমকি সত্ত্বেও সিন্ধু নদীর উপনদী চন্দ্রভাগার উপর বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর কৌশলগত কারণে সিন্ধু জলচুক্তি কার্যত স্থগিত রেখেছে নয়াদিল্লি, আর সেই পরিস্থিতিতেই পুনরায় গতি পাচ্ছে বহু পুরনো সাওয়ালকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি এই সপ্তাহেই বৈঠকে বসবে ১৮৬৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটির পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
সাওয়ালকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই—১৯৬০ সালে। পরে ১৯৮৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একবার প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করলেও কেন্দ্র ও রাজ্যের দ্বন্দ্বের কারণে তা থমকে যায়। চন্দ্রভাগা নদী সিন্ধুর পশ্চিম তীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী এই নদীর জল ব্যবহারের অধিকার পাকিস্তানের। তবে চুক্তি স্থগিত রাখার পর ভারত নিজের জলসম্পদ ব্যবহারের অধিকারকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে চাইছে।
অতীতে স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের একাধিক বৈঠকে পাকিস্তান এই প্রকল্পের তথ্য চেয়েছিল ভারতের কাছে। কিন্তু নয়াদিল্লি জানায়, চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ শুরুর ছয় মাস আগে অন্য পক্ষকে জানানোই যথেষ্ট, তথ্য দিতে তারা বাধ্য নয়।
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের কৌশল আরও দৃঢ় হয়েছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ মন্ত্রকের বন উপদেষ্টা কমিটির ছাড়পত্র প্রয়োজন। বিদ্যুৎ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুরোধে ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ১১ জুন বিদেশ মন্ত্রকের সচিব এবং ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব পরিবেশ মন্ত্রককে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠান এই প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নিতে।
এদিকে, সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত হওয়ার পর থেকেই এই বাঁধ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার হুমকি এসেছে। তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ প্রকাশ্যে বলেছেন, “সিন্ধু সিস্টেমের নদীগুলিতে জল আটকে বাঁধ তৈরি করা হলে তা চুক্তি লঙ্ঘন এবং সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বলে গণ্য হবে। ভারত এমন কিছু করলে আমরা সেই নির্মাণ গুঁড়িয়ে দেব।”
এমনকি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরও একই সুরে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। কাজ শেষ হলে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেটি ধ্বংস করে দেব। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ফুরিয়ে যাবে না।”
এই হুমকিতে ভারত বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়। কৌশলগত প্রয়োজনে নয়াদিল্লি এখন এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে। পাকিস্তানের বারংবার আপত্তি ও হুঁশিয়ারির মধ্যেও প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। চন্দ্রভাগায় বাঁধ নির্মাণ কেবল জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পথই খুলে দেবে না, বরং তা ভারতের জলসম্পদ নিয়ন্ত্রণের কৌশলকেও আরও শক্তিশালী করবে।
স্পষ্ট, পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে, কিন্তু ভারত নিজের পরিকল্পনা থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসছে না। বহু দশক ধরে স্থগিত থাকা সাওয়ালকোট প্রকল্প আবারও গতি পাচ্ছে, আর তা বাস্তবায়িত হলে কাশ্মীরের জ্বালানি ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে।
এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, পাকিস্তানের সতর্কবাণী নয়, নিজের স্বার্থরক্ষার দিকেই নজর দিচ্ছে ভারত। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধ প্রকল্প ভারতকে শক্তি ও জলনিয়ন্ত্রণ—দুই ক্ষেত্রেই বড় সুবিধা এনে দিতে পারে, আর সেই লক্ষ্যেই এখন আরও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে নয়াদিল্লি।
ব্যালকনির উপর উড়ালপুল! নাগপুরের সেতু স্মরণ করাচ্ছে ভোপালের ৯০ ডিগ্রি রেলসেতুর ঘটনার কথা

