Monday, December 1, 2025

শিরোনাম: “আপনারা নরকের দিকে এগোচ্ছেন!” – রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে পশ্চিমকে কড়া বার্তা ট্রাম্পের

Share

রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে পশ্চিমকে কড়া বার্তা ট্রাম্পের

দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ফিরে প্রথমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফের ঝড় তুললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই তিনি একদিকে যেমন পশ্চিমি দেশগুলির অভিবাসন নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন, তেমনই রাষ্ট্রপুঞ্জের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, এই আন্তর্জাতিক সংগঠন আজ কেবল কথার ফুলঝুরি ছাড়া কিছুই নয় এবং বিশ্বের শান্তি রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

অভিবাসন ইস্যুতে পশ্চিমি দেশগুলিকে সরাসরি আক্রমণ করে ট্রাম্প বলেন, “আপনাদের দেশগুলি নরকের দিকে এগোচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, ইউরোপসহ পশ্চিমের একাধিক দেশ অবৈধ অভিবাসীদের অবাধে প্রবেশ করতে দিচ্ছে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জও সেই প্রক্রিয়ায় নীরব দর্শকের ভূমিকা নিচ্ছে। “আপনাদের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ চলছে অবাধে। আর সেই অনুপ্রবেশে রাষ্ট্রপুঞ্জও হাত লাগিয়েছে,” মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

রাষ্ট্রপুঞ্জকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্পের কটাক্ষ আরও তীব্র হয়। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জের আসল কাজ কী? দেখে মনে হয় এরা শুধু ভারী ভারী শব্দে চিঠি লিখতে জানে। কিন্তু ফাঁপা কথা দিয়ে যুদ্ধ থামানো যায় না। শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষমতাও এদের নেই।”

এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সম্প্রতি ব্রিটেনে অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দেশটি কোনও ভাবেই অতি-দক্ষিণপন্থীদের চাপে নীতিগত অবস্থান বদলাবে না। তাঁর মতে, ব্রিটেনের পতাকা দেশের বৈচিত্র্যের প্রতীক, আর তাই অভিবাসনবিরোধী মতের সঙ্গে তিনি একমত নন।

কিন্তু ট্রাম্প শুরু থেকেই অন্য পথে হাঁটছেন। ক্ষমতায় ফিরে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর শাসনে ‘আমেরিকা আগে’ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ প্রথমে সুযোগ ও সুবিধা পাবেন মার্কিন নাগরিকরা, তারপরই অন্য দেশের মানুষ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে তাঁর এই বক্তব্য সেই নীতিকেই আরও একবার সামনে আনল।

ট্রাম্প শুধু অভিবাসন প্রসঙ্গেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও তোপ দেগেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত ও চিনের কাছ থেকে পরোক্ষভাবে সহায়তা পাচ্ছে। এটি ট্রাম্পের পুরনো অভিযোগ হলেও মঙ্গলবার তিনি আবারও সেই প্রসঙ্গ টেনে আনেন এবং নয়াদিল্লি ও বেজিংকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করান।

রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূমিকা নিয়েও তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পায়। ট্রাম্প বলেন, “এই সংস্থা আজ শুধু আলোচনার জায়গায় সীমাবদ্ধ। কাজের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা প্রায় শূন্য।” তাঁর মতে, বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জকে কেবল বক্তব্য দেওয়া নয়, বাস্তবে শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও নিতে হবে।

এই বক্তব্যের ফলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন পড়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান একাকীত্ববাদী নীতির ইঙ্গিত বহন করছে। আবার অনেকে বলছেন, অভিবাসন এবং বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের বক্তব্য পশ্চিমি দেশগুলির প্রতি এক ধরণের সতর্কবার্তা।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে তাঁর এই ভাষণ কেবল পশ্চিমি নীতি নিয়েই প্রশ্ন তোলেনি, বরং বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতেও নতুন করে আমেরিকার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ট্রাম্পের দাবি, যদি পশ্চিম ও রাষ্ট্রপুঞ্জ নিজেদের নীতি ও ভূমিকা পুনর্বিবেচনা না করে, তবে তারা ক্রমশ এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগোবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় তাঁর এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে আগামী দিনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এখন দেখার বিষয়, পশ্চিমি দেশগুলি ট্রাম্পের এই সতর্কবার্তা কতটা গুরুত্ব সহকারে নেয়।

ব্যালকনির উপর উড়ালপুল! নাগপুরের সেতু স্মরণ করাচ্ছে ভোপালের ৯০ ডিগ্রি রেলসেতুর ঘটনার কথা

Read more

Local News