ভেজা বাতিস্তম্ভই হল মৃত্যু কারণ
কলকাতা ও শহরতলিতে সোমবার রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টি। পুরো শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ—প্রায় সব এলাকায় পানি জমেছে। ঘরে বাইরে, রাস্তাঘাট ও গলিপথ—সবকিছুতেই জল ভরে গেছে। ফলে শহরের সাধারণ মানুষ, বিশেষত যারা বাইরে কাজ করেন, বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে একের পর এক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একবালপুরের হোসেন শাহ রোডে ৬০ বছর বয়সি জীতেন্দ্র সিংহ ভোর ৫টার দিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়াও নেতাজিনগর ও বেনিয়াপুকুরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জন মারা গেছেন। গড়িয়াহাট ও গড়ফাত থেকেও একেকজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নেতাজিনগর বাসস্ট্যান্ডে এক ফলের দোকান চালাতেন প্রশান্ত কুন্ডু। মঙ্গলবার সকালেও তিনি দোকান খোলার জন্য সাইকেলে চেপে বের হন। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছিয়ে, বাতিস্তম্ভের পাশে সাইকেল হেলান দিয়ে রাখা অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। প্রায় দেড় ঘণ্টার পরে পুলিশ তাঁর দেহ উদ্ধার করে। স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী ঘটনাটি নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, “এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই এলাকার জল জমার মাত্রা আমার জীবনে আগে কখনও দেখিনি। কলকাতার ধারণক্ষমতার চেয়ে দশ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আমরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চেষ্টা করছি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিতে।”
শহরের অন্যান্য এলাকা ও বাড়ি-ঘরও জলমগ্ন। রাস্তা, গলিপথ, ও গাড়ি পার্কিং—প্রায় সবই জলের নিচে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের বরাতে জানা গেছে, এমন কিছু রাস্তা যেখানে আগে কখনও জল জমেনি, এবার সেখানে ও পানি জমেছে। জল সরানোর চেষ্টা চলছে, তবে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টির কারণে পানি দ্রুত নামছে না।
এভাবে, শহরের সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র যানজট এবং ভাঙা অবকাঠামোর সমস্যায় সীমাবদ্ধ নেই; বরং বিদ্যুতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থলে ঝুঁকি বেড়েছে। ভেজা বাতিস্তম্ভ বা বিদ্যুৎ তারের সংস্পর্শে আসা সহজাত বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে শহরের পরিস্থিতি এখন বিপর্যস্ত। মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রশাসন ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো রাতভর কাজ করছে, যাতে দ্রুত পানি সরানো সম্ভব হয়। যদিও শহরের অনেক এলাকা এখনও পানির নিচে, তারপরও উদ্ধার ও নিরাপত্তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, কলকাতায় নাগাড়ে বৃষ্টি এবং জলমগ্ন রাস্তায় ভেজা বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর সংস্পর্শেই মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। সতর্কতা অবলম্বন না করলে এমন দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
ব্যালকনির উপর উড়ালপুল! নাগপুরের সেতু স্মরণ করাচ্ছে ভোপালের ৯০ ডিগ্রি রেলসেতুর ঘটনার কথা

