ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেতে পারে ভারতের স্বার্থ
আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্দরে ফের ঝড় তুলেছে আমেরিকার সিদ্ধান্ত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন, আর সেই নীতির আঁচ এসে লাগছে ভারতের দিকেও। বিষয়টি বাণিজ্যিক যেমন, তেমনি কৌশলগত দিক থেকেও নয়াদিল্লির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর।
এই চাবাহার বন্দরের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেক পুরনো। পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় পৌঁছনোর বিকল্প পথ হিসেবে নয়াদিল্লি বহু দিন ধরেই ভরসা করছে এই বন্দরকে। শুধু তাই নয়, পশ্চিম এশিয়া হয়ে রাশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গেও সহজে বাণিজ্যের সুযোগ করে দেয় এটি। ২০২৪ সালের মে মাসে ইরান ও ভারতের মধ্যে ১০ বছরের একটি চুক্তি হয়, যাতে যৌথভাবে এই বন্দর পরিচালনা করছে নয়াদিল্লি ও তেহরান। ফলে চাবাহার ভারতের জন্য শুধু একটি বাণিজ্যকেন্দ্র নয়, বরং কৌশলগতভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
কিন্তু ঠিক এই জায়গাতেই ধাক্কা দিতে চলেছে আমেরিকা। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। তার পর থেকে চাবাহার বন্দর ব্যবহার করলে জরিমানা দিতে হবে অন্য দেশগুলিকে, যার মধ্যে ভারতও রয়েছে। হোয়াইট হাউসের বক্তব্য, ইরানের অবৈধ আর্থিক কাঠামো ভাঙার জন্য এই পদক্ষেপ। কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে ভারতের ওপরেই।
ইতিমধ্যেই জুন মাসে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বড়সড় পদক্ষেপ করেছে আমেরিকা। গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে— এই অভিযোগে ইরানের তিনটি কেন্দ্রে হানা দিয়েছিল মার্কিন সেনা। সেই ঘটনার পর থেকেই আমেরিকা-ইরান সম্পর্ক তলানিতে নেমেছে। এখন সেই চাপ আরও বাড়াতে ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
কিন্তু ভারতের উদ্বেগ অন্য জায়গায়। চাবাহার বন্দর পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর থেকে মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দূরে। গ্বদরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চিনের হাতে। ফলে চাবাহার নিয়ে ভারত যদি নিয়ন্ত্রণ হারায়, তবে আরব সাগরে বেজিংয়ের প্রভাব আরও বেড়ে যাবে। এর ফলে শুধু ভারতের কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট হবে না, বরং বহু সংস্থা, যারা এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চাবাহারের পরিকল্পনা নতুন নয়। ২০০৩ সালেই নয়াদিল্লি তেহরানকে প্রস্তাব দিয়েছিল বন্দরটি আধুনিক করার। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন আজ যখন আকার নিচ্ছে, তখনই সামনে এল এই নতুন সঙ্কট। ভারত যেমন বাণিজ্যের স্বার্থে বন্দরের উপর নির্ভর করছে, তেমনই আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার এই নীতি মূলত ইরানকে চাপে ফেলতে হলেও এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারতের মতো ঘনিষ্ঠ অংশীদার দেশের উপর। জরিমানা চাপলে ভারতের জন্য চাবাহার ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়বে, আর তার ফলে বেজিং ও ইসলামাবাদের হাত আরও শক্ত হবে।
সব মিলিয়ে চাবাহার এখন কেবল একটি সমুদ্রবন্দর নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতির টানাপোড়েনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নয়াদিল্লির স্বপ্নের এক বড় পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ভারত কীভাবে এই কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে।
ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

