Monday, December 1, 2025

ব্রিক্‌সকে ‘ভ্যাম্পায়ার’ বলে কটাক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের! পাল্টা কূটনৈতিক বার্তা দিল ভারত

Share

পাল্টা কূটনৈতিক বার্তা দিল ভারত

আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের উত্তাপ ছড়াল মার্কিন প্রশাসন ও ব্রিক্‌স জোটকে ঘিরে। সোমবার অনুষ্ঠিত হলো ব্রিক্‌স-এর ভার্চুয়াল সম্মেলন। সেখানে একদিকে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি না গিয়ে বাণিজ্যে একজোট হওয়ার ডাক দিলেন, অন্যদিকে ভারতও স্পষ্ট করে দিল— অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড হতে হবে ন্যায্য ও স্বচ্ছ। এই বৈঠকের দিনেই মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর মন্তব্যে আবারও চড়ল রাজনৈতিক পারদ।

নাভারো এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ব্রিক্‌স সদস্যদের তুলনা করলেন ‘ভ্যাম্পায়ার’-এর সঙ্গে। তাঁর অভিযোগ, “যখন তারা নিজেদের পণ্য আমেরিকার কাছে বিক্রি করে, তখন অন্যায্যভাবে ব্যবসা করে আমাদের রক্ত শুষে নেয়।” শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন, “আমি জানি না ব্রিক্‌স কীভাবে তৈরি হলো, বা এত দিন টিকে আছে কীভাবে, কারণ ঐতিহাসিক ভাবে এই দেশগুলি একে অপরকে ঘৃণা করে।” তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক এই গোষ্ঠী আর বেশিদিন টিকবে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের শুরু থেকেই ব্রিক্‌সকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। অতীতেও ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, এই জোট আসলে আমেরিকাবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতিতে অটল থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির উপর বাড়তি শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। এবার তাঁর ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য উপদেষ্টা সরাসরি কটাক্ষ করলেন, যা স্বাভাবিকভাবেই আলোড়ন তুলেছে।

ব্রিক্‌স-এর সদস্যপদে বর্তমানে রয়েছে ভারত, চিন, রাশিয়া, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে ভারত ও ব্রাজিল আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপড়েনের মুখে পড়েছে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ব্রাজিলের আমদানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। সেই অবস্থায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা-ই ডেকেছিলেন সোমবারের বৈঠক। ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেখানে যোগ দেননি, দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

জয়শঙ্কর বৈঠকে স্পষ্ট ভাষায় জানান, “অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ন্যায্য হতে হবে, এবং স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে হতে হবে।” তিনি সতর্ক করেন, বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন রাজনৈতিক বা অন্য কোনও ইস্যুকে এই ক্ষেত্রের মধ্যে টেনে আনা উচিত নয়। ভারতের এই অবস্থান বুঝিয়ে দিল— মার্কিন চাপ কিংবা ব্রিক্‌স-এর অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন, কোনও কিছুকেই নিছক আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তব অর্থনৈতিক স্বার্থের মাপকাঠিতেই দেখা হবে।

অন্যদিকে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মার্কিন নীতিকে পরোক্ষ আক্রমণ করে বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের একজোট হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।” তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট— ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও বাণিজ্যিক চাপের মোকাবিলায় ব্রিক্‌সকে আরও সুসংহত হতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই কটাক্ষ এক নতুন প্রশ্নও তুলছে— তাহলে কি ভবিষ্যতে ব্রিক্‌সের দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও খারাপ হবে? কারণ, অতীতে যেমন বারবার দেখা গেছে, আমেরিকার শুল্কনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় প্রভাব ফেলেছে। এবার সরাসরি ‘ভ্যাম্পায়ার’ আখ্যা দিয়ে নাভারো আসলে শুধু জোটকে নয়, তার অন্তর্গত প্রতিটি দেশকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন।

সব মিলিয়ে, ভার্চুয়াল বৈঠকের দিনে মার্কিন মন্তব্য একদিকে যেমন ব্রিক্‌সকে নতুন করে একত্র হওয়ার সুযোগ করে দিল, তেমনই আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে আরও এক দফা চাপানউতোর তৈরি করল। এখন দেখার বিষয়, ভারত-চিন-রাশিয়া-ব্রাজিল-দক্ষিণ আফ্রিকা এই জোট ভবিষ্যতে কতটা দৃঢ়ভাবে মার্কিন চাপে টিকে থাকতে পারে।

ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

Read more

Local News