সরকারি স্কুলে ভরসা হারাচ্ছে দেশ!
টানা তিন বছর ধরে দেশের স্কুলে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যা কমছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নতুন রিপোর্টে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক এই পরিসংখ্যান। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত দেশজুড়ে তথ্য সংগ্রহ করে তৈরি এই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্কুলে মোট ভর্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪.৬৯ কোটি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৪.৮০ কোটি। অর্থাৎ এক বছরে ১১ লক্ষ ছাত্রছাত্রী স্কুল থেকে বাদ পড়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, মেয়ে পড়ুয়ার ভর্তি সামান্য বেড়েছে, কিন্তু ছেলেদের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
কোভিড-পর্বের ধাক্কা সামলে স্কুলে ভর্তির হার বাড়বে বলে মনে করা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। গত তিন বছরে প্রায় ৫০ লক্ষ পড়ুয়া কমে গিয়েছে স্কুলে। শিক্ষা মন্ত্রকের একাধিক আধিকারিক জানিয়েছেন, তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ও জন্মহারের পতন এই প্রবণতার অন্যতম কারণ। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
সবচেয়ে বেশি ভর্তির পতন হয়েছে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে যেখানে এই স্কুলগুলিতে ভর্তি ছিল ১৩.৬২ কোটি, ২০২৪-২৫-এ তা নেমেছে ১২.১৬ কোটিতে। অপরদিকে, বেসরকারি স্কুলে ভর্তি বেড়েছে প্রায় ১.২ কোটি। এখন দেশে ৩৯ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে বেসরকারি স্কুলে। একই সময়ে প্রায় ৫০ হাজার সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আর বেড়েছে ৪৮ হাজার বেসরকারি স্কুল।
শিক্ষকদের মতে, সরকারি স্কুলের দুর্বল পরিকাঠামো এবং পর্যাপ্ত শিক্ষককর্মীর অভাব এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর কথায়, “কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতির ফলে শিক্ষার বেসরকারিকরণ বেড়েছে। ফলে সাধারণ ও গরিব পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে পড়ছে।”
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্যে কেন্দ্রের শিক্ষা নীতির তীব্র সমালোচনা ধ্বনিত হয়েছে। তাঁর দাবি, “কেন্দ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাণিজ্যিক করে তুলছে।” একই মত পোষণ করছেন ‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলও।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির হার সবচেয়ে বেশি কমেছে। তবে আগেই প্রি-স্কুলে পড়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ১.৯২ কোটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ আগে অঙ্গনওয়াড়িতে পড়েছে।
অন্যদিকে, নবম-দশম শ্রেণিতে স্কুলছুট বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পড়াশোনার পদ্ধতিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা এবং সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নত করা এখন সময়ের দাবি। তা না হলে, শিক্ষা ব্যবস্থায় এই ধস থামানো মুশকিল হবে।
ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

