Monday, December 1, 2025

দিল্লিতে রুদ্ধশ্বাস অভিযান: ১ কোটি টাকার প্রতারণা মামলায় দুই নাইজেরীয় গ্রেফতার, নেতৃত্বে কলকাতার মহিলা ইনস্পেক্টর

Share

১ কোটি টাকার প্রতারণা মামলায় দুই নাইজেরীয় গ্রেফতার, নেতৃত্বে কলকাতার মহিলা ইনস্পেক্টর

দিল্লির ব্যস্ত পালাম এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় ঘটল এক সিনেমার মতো অভিযান। কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ দল হানা দিয়ে গ্রেফতার করল দুই নাইজেরীয় নাগরিককে, যাঁরা ১ কোটি টাকারও বেশি প্রতারণার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বলে দাবি তদন্তকারীদের। এই চক্রের হদিস পেতে এবং গ্রেফতারি অভিযান চালাতে নেতৃত্ব দেন কলকাতার মহিলা ইনস্পেক্টর সোমা মাইতি, যিনি নিজে দলের সামনের সারিতে থেকে পুরো অভিযান সফল করেন।

ঘটনাটি শুরু হয়েছিল গত মে মাসে। অভিযোগ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর নাম ভাঁড়িয়ে এবং ব্রিটেনের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার পরিচয় ব্যবহার করে কলকাতার এক বাসিন্দার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১ কোটি ১০ লক্ষ ৪১ হাজার টাকারও বেশি। অভিযুক্তরা ভুয়ো ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট এবং নথি তৈরি করে বিনিয়োগের প্রলোভন দিয়েছিল। টাকা পাঠানোর পরেই ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন, তিনি ফাঁদে পড়েছেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর কলকাতা পুলিশের তদন্ত শুরু হয়। সাইবার তথ্য বিশ্লেষণ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে জানা যায়, টাকা যে অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল তা দিল্লির পালাম এলাকার সঙ্গে যুক্ত। এরপরেই শুরু হয় গোপন নজরদারি।

বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ দিল্লির পালাম এলাকার একটি ভবনে হানা দেয় কলকাতা পুলিশের দল। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে দিল্লি পুলিশও। ইনস্পেক্টর সোমার নেতৃত্বে ছিলেন সার্জেন্ট শান্তনু গায়েন এবং চার কনস্টেবল— জ়েড হোসেন, কে কর্মকার, এ সাহা এবং এম জমাদার। বিকেল ৫টা থেকে ৫টা ১০ মিনিটের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তাঁরা হলেন এজিকে বেঞ্জামিন নওয়াবুনওয়ান্নে এবং বিলিভ ওন্যেচেলেম ঝন। পুলিশ দেখেই তাঁরা পালানোর চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তির মধ্যে এক কনস্টেবল আহত হন। তবু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় তারা।

তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছেন ১২টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, দু’টি কি-প্যাড ফোন, একটি ল্যাপটপ, একটি রাউটার, দু’টি ব্রিটিশ সিম কার্ড, চারটি এটিএম কার্ড এবং একটি পেন ড্রাইভ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই ঘরেই বসে চলত নথি জাল করার কাজ।

এর আগে একই প্রতারণা মামলায় আরও তিন নাইজেরীয় নাগরিককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। নতুন গ্রেফতারি ঘটনার পর পুলিশের ধারণা, একটি আন্তর্জাতিক চক্র সংগঠিতভাবে সাইবার প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে।

কলকাতা পুলিশের এই অভিযান এখন নজর কেড়েছে সারা দেশে। একদিকে মহিলা অফিসারের সাহসী নেতৃত্ব, অন্যদিকে পুলিশি বুদ্ধিমত্তায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রকে ধরার কৌশল— এই ঘটনা সাইবার অপরাধ দমনে বড় মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তদন্তকারী সূত্রে জানা গিয়েছে, চক্রটির আরও সদস্য দেশের বাইরে বসে কাজ করছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই নেটওয়ার্কের হদিস পেতে চেষ্টা চলছে। এই মামলায় আরও বড় তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা তদন্তকারীদের।

এই অভিযানে প্রমাণিত হলো, আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্র যতই শক্তিশালী হোক, প্রযুক্তি ও সাহসী পরিকল্পনার জোরে অপরাধীদের আইন হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

ছবিমুক্তির আগেই কোটির ঘরে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ! টলিউডে বাজিমাত এই জুটির

Read more

Local News