বিজেপির ভরসা ‘নীতিবোধসম্পন্ন’ বিরোধীদের উপর!
সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় পেশ করল বহুল আলোচিত ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল। প্রস্তাবিত এই বিলে বলা হয়েছে, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে যদি প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য কিংবা কেন্দ্রের অন্য কোনও মন্ত্রী টানা ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিন থেকে তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন। বিলটি পাশ করতে হলে সংসদের দুই কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন। বিরোধীরা বলছে, বিজেপির হাতে সেই সমর্থন নেই, তাই এই বিল পাশ হওয়া অসম্ভব।
তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। বিরোধীদের একাংশের দাবি, বিজেপি এই বিল তুলে আসলে এসআইআর থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, এই বিলের অজুহাতে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর কৌশল নিচ্ছে বিজেপি। এই আশঙ্কাকে আরও জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য। সোমবার তিনি বলেন, “আমি আশাবাদী যে এই বিল পাশ হবে। বিরোধী শিবিরেও বহু সাংসদ আছেন, যাঁরা নীতিবোধে বিশ্বাস করেন এবং নৈতিকতার পক্ষে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শাহের এই মন্তব্য কেবলমাত্র আশাবাদী বক্তব্য নয়, বরং একটি বার্তা। মধ্যপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে অতীতে বিজেপির কৌশলী ভাঙন-গড়া রাজনীতির নজির রয়েছে। শিন্ডে-উদ্ধব সংঘাত কিংবা অজিত পওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপি ভাঙনের ঘটনা আজও তাজা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শাহর ‘নীতিবোধ’ প্রসঙ্গ আসলে সংখ্যার অঙ্কে নতুন সমীকরণ তৈরি করার ইঙ্গিত।
কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করে চমক দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, তারুরের মতো ‘অপ্রত্যাশিত’ সমর্থক কি আরও আছেন? যদিও বিরোধীরা আত্মবিশ্বাসী, সহজে ভাঙন ঘটানো সম্ভব হবে না। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “এই বিল এনে বিজেপি পিছনের দরজা দিয়ে বিরোধী রাজ্যগুলিকে দখল করতে চাইছে। কিন্তু তারা সফল হবে না।” তৃণমূলও একই সুরে বলছে, বিজেপির হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই।
তবু রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল এখানেই—সংখ্যার অঙ্ক না মেলার পরেও কেন বিজেপি এত বড় একটি বিল তুলল? শাহর আশাবাদী সুর ও বিজেপির অতীত কৌশল দেখে অনেকেই মনে করছেন, সংসদের অঙ্কে হয়তো নতুন নাটকীয়তা তৈরি হতে চলেছে।

