Monday, December 1, 2025

দমদমে মোদীর তৃণমূল বিরোধী হুঁশিয়ারি: দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ ও বাঙালি অস্মিতা নিয়ে তোপ

Share

দমদমে মোদীর তৃণমূল বিরোধী হুঁশিয়ারি!

দমদমের জেল মাঠে শুক্রবার বিকেলে রাজনৈতিক সভার মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট বার্তা দিলেন— পশ্চিমবঙ্গকে দুর্নীতি আর অনুপ্রবেশের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করতে হলে তৃণমূলকে সরাতেই হবে। প্রায় চল্লিশ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ করলেন তৃণমূলকে।

ভাষণের শুরুতেই মোদী কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, গত এক দশকে রেল থেকে জাতীয় সড়ক— সব ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের জন্য তাঁর সরকার আগের তুলনায় বহু গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে। কিন্তু অভিযোগের সুরে তিনি দাবি করেন, “আমরা যে টাকা গরিব মানুষের কল্যাণে পাঠাই, সেই টাকা এখানে লুট হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের ক‍্যাডারদের পকেট ভরছে, অথচ বাংলার সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।”

মোদী উদাহরণ টেনে বলেন, অসম আর ত্রিপুরার মতো রাজ্যে বিজেপি সরকার আসার পর সাধারণ মানুষ সরাসরি কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। পানীয় জল থেকে আয়ুষ্মান ভারত— সব প্রকল্প ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দুর্নীতি সাধারণ মানুষকে সেই সুফল থেকে বঞ্চিত করছে।

এর পরেই মোদী অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বাংলার মানুষের নিরাপত্তা ও অস্মিতা বার বার আঘাত পাচ্ছে। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় যেভাবে অনুপ্রবেশ বাড়ছে, তা রাজ্যের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। তৃণমূল এর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’’ তিনি দাবি করেন, এই অনুপ্রবেশই বাংলার সংস্কৃতি ও সমাজের শিকড় দুর্বল করে দিচ্ছে।

তবে মোদীর ভাষণের সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে ছিল দুর্নীতি প্রসঙ্গ। সদ্য সংসদে তাঁর সরকার যে দুর্নীতি বিরোধী বিল পেশ করেছে, তার কথা টেনে তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধীরা সেই বিলের বিরোধিতা করছে শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্য। তাঁর কথায়, “একজন ছোট সরকারি কর্মী জেলে গেলে চাকরি চলে যায়, অথচ মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে কোনও আইন নেই। এই বৈষম্য আমরা মানতে পারি না।” তিনি আরও বলেন, “তৃণমূলের মন্ত্রীরা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে রেশন কেলেঙ্কারি— নানা মামলায় জেলে গিয়েছেন। তাঁদের বাড়ি থেকে নোটের পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। তবু তাঁরা পদ ছাড়তে চাননি। এটাই তৃণমূলের চরিত্র।”

এখানেই থামেননি প্রধানমন্ত্রী। নাম না করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। কটাক্ষের সুরে বলেন, “সংবিধানকে যারা অমান্য করেন, জনগণকে যারা প্রতারিত করেন, তাঁদের পদে থাকার কোনও অধিকার নেই। তৃণমূল দুর্নীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে।”

বক্তৃতার শেষ ভাগে মোদী বাঙালির আবেগের দিকেও আঘাত করেন। তিনি বলেন, “বাংলার গৌরব, বাংলার সংস্কৃতি আজ প্রশ্নের মুখে। তৃণমূল শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করছে। তাই বাংলাকে বাঁচাতে, দুর্নীতি আর অনুপ্রবেশ থেকে মুক্ত করতে বিজেপি সরকার চাই।”

দমদমের মঞ্চ থেকে তাঁর এই আক্রমণ স্পষ্ট করে দিল, আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ এবং বাঙালির অস্মিতা প্রসঙ্গকেই।

জমি কেনার নামে শত কোটির সম্পত্তি দখলের চেষ্টা? বাঁকে বিহারী মন্দিরকে ঘিরে উত্তাপ

Read more

Local News