Monday, December 1, 2025

জমি কেনার নামে শত কোটির সম্পত্তি দখলের চেষ্টা? বাঁকে বিহারী মন্দিরকে ঘিরে উত্তাপ

Share

জমি কেনার নামে শত কোটির সম্পত্তি দখলের চেষ্টা?!

উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দির ঘিরে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। ভক্তদের ভিড়, নিরাপত্তা, করিডর নির্মাণ থেকে শুরু করে মন্দির পরিচালনা—সবকিছু নিয়েই চলছে টানাপোড়েন। কিন্তু এবার বিতর্ক আরও বড় আকার নিয়েছে, কারণ ১৫০ বছরের পুরনো এই কৃষ্ণমন্দিরের ভবিষ্যৎ যেন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে আটকে পড়েছে।

দুর্ঘটনার স্মৃতি আর করিডরের প্রস্তাব

২০২২ সালের জন্মাষ্টমীর দিনে বাঁকে বিহারী মন্দিরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে দু’জন ভক্তের মৃত্যু হয়, আহত হন বহুজন। সেই ঘটনার পর থেকেই পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। এর জেরেই যোগী আদিত্যনাথ সরকার প্রস্তাব দেয় বাঁকে বিহারী করিডর তৈরির। সরকারের যুক্তি—প্রশস্ত প্রবেশপথ, আলাদা দর্শনপথ, শৌচাগার, পানীয় জল, চিকিৎসা কেন্দ্র—এসব ব্যবস্থা করা গেলে ভক্তরা অনেক বেশি সুরক্ষিত হবেন।

সরকারের পরিকল্পনা বনাম বিরোধিতা

করিডর প্রকল্প নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং মন্দিরের ঐতিহ্যবাহী সেবায়েত গোস্বামী পরিবার। তাঁদের দাবি, সরকারের এই করিডর আসলে জমি অধিগ্রহণ এবং মন্দিরের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ দখলের অজুহাত। কারণ করিডর তৈরি করতে গেলে মন্দির চত্বর ঘেঁষে থাকা প্রায় ৩০০টি বাড়ি এবং একাধিক ছোট মন্দির ভেঙে ফেলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বহু পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করছে।

অন্যদিকে, যোগী সরকারের পাল্টা বক্তব্য—মন্দির পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতে এবং দর্শনার্থীদের সুবিধা দিতে সরকারের অংশগ্রহণ জরুরি। করিডর হলে স্থানীয়দেরও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যারা বাস্তুচ্যুত হবেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দেওয়া হবে।

আদালতের নির্দেশ এবং ট্রাস্ট বিল

এই নিয়ে একাধিকবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। প্রথমে হাই কোর্ট করিডর নির্মাণে সম্মতি দিলেও জানায়, এর খরচ সরকারকেই বহন করতে হবে। মন্দিরের তহবিল ব্যবহার করা যাবে না। পরে সুপ্রিম কোর্ট আংশিক পরিবর্তন এনে জানায়, জমি কেনার জন্য মন্দিরের স্থায়ী আমানতের একটি অংশ ব্যবহার করতে পারে সরকার।

এরপর থেকেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি নতুন বিল আনে—বাঁকে বিহারী মন্দির ট্রাস্ট বিল, ২০২৫। এই বিলে বলা হয়েছে, মন্দির পরিচালনার জন্য সরকার-মনোনীত অছি পরিষদ গঠন করা হবে, যেখানে মোট ১৮ জন সদস্য থাকবেন। বর্তমান সেবায়েত পরিবার অভিযোগ তুলেছে, এই বিলের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য আসলে মন্দিরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

ঐতিহ্য বনাম আধুনিকীকরণ

স্থানীয়দের ভয়—সরকারের হস্তক্ষেপে শুধু জমি নয়, মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্যদিকে সরকারের দাবি, পূজা-পার্বণ ও ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখেই উন্নয়ন হবে।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—মন্দিরের নামে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি আসলেই কি সরকারের নজরে? করিডর তৈরির যুক্তি কি শুধুই ভক্তদের নিরাপত্তা, নাকি এর আড়ালে অন্য কোনও স্বার্থ লুকিয়ে আছে?

একদিকে উন্নয়নের স্বপ্ন, অন্যদিকে ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই—এই দুইয়ের মাঝে আটকে গেছে বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দির। পরিস্থিতি কোথায় গড়াবে, তা সময়ই বলবে।

জিএসটি সংস্কার: শুধু ৫% আর ১৮% কর, মদ-সিগারেটে সর্বোচ্চ ৪০%

Read more

Local News