কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারণ!
ইংরেজি প্রবাদে যেমন বলা হয়— ‘সাফল্যের পিতা বহু’, তেমনই শুক্রবার কলকাতা মেট্রোর তিনটি নতুন রুটের উদ্বোধন ঘিরে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে কৃতিত্বের রঙিন লড়াই। প্রকল্পের ফিতা কাটলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই মঞ্চেই অনুপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি একই দিনে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে স্মৃতিচারণ করলেন নিজের ‘রেলমন্ত্রী’ জীবনের কথা। আর এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বহুদিন ধরেই ভোটের ময়দান থেকে সরে যাওয়া বামেরাও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিলান্যাসের পুরনো ছবি ঘেঁটে দাবি তুলল কৃতিত্বের।
নতুন তিন রুটে মেট্রোর যাত্রা
শুক্রবার উদ্বোধন হওয়া সম্প্রসারিত মেট্রোর মধ্যে রয়েছে তিনটি রঙিন রুট। সবুজ লাইনে (হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ) এখন যুক্ত হল শিয়ালদহ। কমলা লাইনে দক্ষিণ কলকাতার রুবি থেকে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস বরাবর চলবে মেট্রো পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা পর্যন্ত। আর হলুদ লাইনে নোয়াপাড়া থেকে মিলল বিমানবন্দর পর্যন্ত সরাসরি সংযোগ। দুর্গাপুজোর আগে এই তিন নতুন রুট চালু হওয়ায় কলকাতাবাসী ও শহরতলির মানুষের কাছে এটি নিঃসন্দেহে এক বড় উপহার।
মোদীর হাত ধরে সূচনা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই তিনটি রুটের উদ্বোধন করে দমদমের সভাস্থলে যোগ দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই প্রকল্পকে বর্ণনা করেন “পরিবর্তনের পথে আর এক ধাপ” হিসাবে। বিজেপি সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে একে মোদীর সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, কলকাতা ও বাংলার মানুষ এখন যে স্বস্তি ও গতি পাবেন, তা মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগেই সম্ভব হয়েছে।
মমতার স্মৃতিকাতরতা
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকালেই একটি পোস্টে নিজের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। রেলমন্ত্রী হিসেবে প্রকল্পের সূচনা ও অর্থ জোগাড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “মেট্রো সম্প্রসারণ আমার দীর্ঘ সফরের অন্যতম অধ্যায়। আজ আমাকে কিছুটা নস্টালজিক হতে দিন।”
তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন— উভয় ক্ষেত্রেই মমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি যাননি, বরং সমাজমাধ্যমে মনে করিয়ে দিয়েছেন কৃতিত্ব কার প্রাপ্য।
বিজেপির পাল্টা সওয়াল
মমতার সেই নস্টালজিক পোস্টকে নিশানা করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়। তাঁর দাবি, “১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা মুখ্যমন্ত্রীর আজ এই নস্টালজিয়া হাস্যকর। তিনি চাইলে এই প্রকল্প অনেক আগেই শেষ হতে পারত। বরং তাঁর প্রশাসন নানা অজুহাতে কাজ আটকে দিয়েছে।” বিজেপির তরফে সাফ বার্তা— প্রকৃত কৃতিত্ব কার, তা রাজ্যবাসীই বুঝতে পারছেন।
বামেদের ‘ফিরে আসা’
রাজনৈতিক ময়দান থেকে কার্যত সরে যাওয়া বামফ্রন্টও এই দিন সুযোগ হাতছাড়া করেনি। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিলান্যাসের পুরনো ছবি সামনে এনে তার কৃতিত্ব দাবি করেছে তারা। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের বক্তব্য তেমন প্রভাব ফেলছে না, তবে মেট্রো নিয়ে রাজনীতির রঙে আমরাও ছিলাম— সেটি বোঝাতে মরিয়া তারা।
সমাপ্তি
মেট্রোর সম্প্রসারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াত আরও সহজ হবে— এ নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু ফিতার এক টুকরো কাগজ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত জোরদার চলছে কৃতিত্বের লড়াই। কার অবদান বেশি, আর কার দাবি রাজনৈতিক, তা নিয়ে বিতর্ক যতই চলুক, কলকাতাবাসীর কাছে বড় প্রাপ্তি এই নতুন মেট্রো রুটের যাত্রা। শহরের গতি বদলে দেবে এই সংযোজন, আর তার সঙ্গেই রাজনীতির মঞ্চে মিলবে নতুন ‘ট্র্যাক’।

