চার প্রদেশের সাজে স্বস্তিকা!
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়—এই নামের আগে আলাদা বিশেষণ বসানোর প্রয়োজন নেই। রুপোলি পর্দায় যেমন, তেমনি বাস্তব জীবনেও তিনি নিজের স্টাইল ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে বারবার আলোচনায় উঠে আসেন। শাড়ি তাঁর কাছে শুধুই পোশাক নয়, যেন আবেগের এক বিশেষ প্রকাশ। সুতির সরলতা হোক বা বেনারসির ভারী গরিমা—স্বস্তিকার গায়ে পড়লেই শাড়ি পায় এক অনন্য রূপ। এ বার বোন অজপা মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে উঠে এল এক অন্য আয়োজন—দেশের চার প্রদেশের চার ভিন্ন সাজে সেজে উঠলেন স্বস্তিকা।
প্রথমেই বাংলার আটপৌরে রূপ। লালপাড় সাদা শাড়ি, সঙ্গে গাঢ় বেগনি ব্লাউজ়, নাকছাবি, গলায় হার, হাতে ভারী বালা আর মায়ের শাঁখা-পলা। মাথায় ফুলের মালা, সিঁথি জুড়ে সিঁদুর—এ যেন একেবারে বাঙালির ঘরের মেয়ে। হাতে হাতপাখা নিয়ে দাঁড়ানো স্বস্তিকাকে দেখে মনে হয়েছে, যেন পুজোর গন্ধ মেখে উঠেছে ছবির ফ্রেম।
এরপর উত্তর ভারতের ছোঁয়া। লালপাড় নীল শাড়ি, গায়ে ভারী গয়না, মাথায় ভরাট খোঁপায় ফুল, কপালে চন্দনের আঁকিবুঁকি আর সিঁথিভর্তি সিঁদুর—এই সাজ যেন বারাণসীর অলিগলি থেকে উঠে আসা এক চিরচেনা রূপ। ঘরে আলো-আঁধারি মিশে যাওয়ায় সেই সাজে যেন আরও এক ধরণের নাটকীয়তা জুড়েছে।
তৃতীয় সাজ মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্য। কমলা-সবুজ পৈঠানি সিল্কে সেজে উঠলেন স্বস্তিকা। নাকে মরাঠি নথনি, গলায় ভারী গয়না, হাতে সবুজ চুড়ি, কপালে অর্ধচন্দ্র টিপ আর মাথায় ফুলের মালা। যেন মুহূর্তেই দর্শক পৌঁছে গেলেন গর্বিত মহারাষ্ট্রের হৃদয়ে।
শেষে দক্ষিণ ভারতের আমেজ। সর্ষে-হলুদ ও কমলার মিশ্রণে শাড়ি, কপালে রঙিন টিপ, চোখে ঘন কাজল, খোঁপায় ফুলের মালা আর গায়ে ভারী অলঙ্কার—এই সাজের সঙ্গে মানানসই হয়ে উঠল গোটা পটভূমিও, যা কলাপাতার সাজে দক্ষিণের আবহকে আরও জীবন্ত করেছে।
শুধু সাজ নয়, সিঁদুর-শাঁখা নিয়েও খোলামেলা মত দিয়েছেন অভিনেত্রী। কারও কটাক্ষে ভ্রুক্ষেপ করেন না তিনি। তাঁর কথায়, “এত লোকে আমাকে সিঁদুর পরিয়েছে—অভিনেতা, রূপটান শিল্পী, পুরোহিত—তাই এর মূল্য আমার কাছে অন্যরকম। সিঁদুর মানেই যে জীবনের সঙ্গে বেঁধে ফেলা, তা তো নয়।” হাসতে হাসতে আরও বলেন, “এক চুটকি সিঁদুর কি কিমত তুম কেয়া জানো? আমার কাছে এর দাম আলাদা!”
বোন অজপার দাবি, ছোট থেকেই স্বস্তিকা সাজতে ভালবাসেন। আর সাজে সবসময় থাকে নিজস্বতার ছোঁয়া। মায়ের প্রভাব, কেয়াপিসির (চৈতালি দাশগুপ্ত) স্টাইল—এসবই তাঁদের সাজের প্রেরণা। তবে শাড়ি নিয়ে স্বস্তিকা নাকি একটু খুঁতখুতে। শাড়ি ঠিক মতো ইস্ত্রি না করা থাকলে তিনি সেটি পরেন না। ব্লাউজ়ের ফিটিং ঠিক না হলে সাজ অসম্পূর্ণ মনে হয় তাঁর কাছে।
বাংলা, উত্তর ভারত, মহারাষ্ট্র কিংবা দক্ষিণ ভারত—এই চার সাজের প্রতিটিতেই ফুলের ব্যবহার থাকায় সবচেয়ে খুশি হয়েছেন স্বস্তিকা। অজপা মজা করে বলেন, “ফুল ছাপা বা ফুলের মালা দিয়ে সাজতে পারলে দিদির খুশির সীমা থাকে না। তাই আমরা ওকে ‘ফুলকুমারী’ বলি!”
স্বস্তিকার এই চার প্রদেশের সাজ কেবল পোশাক নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে একসঙ্গে ধারণ করার এক অভিনব প্রচেষ্টা। তাঁর কথায়, শাড়ি যদি ঠিকভাবে পরা যায়, তবে আর কোনও সাজসজ্জার প্রয়োজনই পড়ে না।

