অপারেশন ‘সিঁদুর’-এর পর আসিম মুনির!
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ফের শোরগোল তুলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর একের পর এক মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলেও এ বার নিজেকে বীর প্রমাণ করতে তিনি সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বক্তব্যে সাহসের ঝলক থাকলেও অতীতের নানা ঘটনার দিকে তাকালে অনেকে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
সম্প্রতি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন সৈনিক। রাওয়ালপিন্ডিতে তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন মুনির। সেখানেই তিনি বলেন, “আমি সৈনিক। দেশের জন্য লড়াই করতেই পৃথিবীতে এসেছি। আর তাই রণাঙ্গনে শহিদ হওয়াই আমার একমাত্র ইচ্ছা।” কিন্তু তাঁর এই কথায় আবেগের ঝড় উঠলেও, অনেক প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তার মতে, বাস্তবে মুনিরের বীরত্ব কেবল মুখেই সীমাবদ্ধ।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। সেই সংঘর্ষে ভারতীয় বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নুর খান বিমানঘাঁটিসহ পাকিস্তানের একাধিক ঘাঁটি ধ্বংস হয়। গোপন সূত্রে জানা যায়, হামলার মুহূর্তে প্রাণভয়ে একটি বাঙ্কারে লুকিয়েছিলেন মুনির। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানেই কাটান তিনি। এমনকি পরের দিনই কূটনৈতিক পাসপোর্টে পরিবারের সদস্যদের বিদেশে পাঠিয়ে দেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমেই লেখা হয়েছিল—“গর্জন করা সিংহ ইঁদুরে পরিণত হয়ে কাঁপছে।”
তবে সমালোচনাকে পাত্তা দেননি মুনির। যুদ্ধবিরতির পরই ঘোষণা করেন, তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান জয় পেয়েছে। শিগগিরই পদোন্নতি পেয়ে ‘ফিল্ড মার্শাল’-এর বিরল মর্যাদা পান তিনি। পাকিস্তানি সেনার ইতিহাসে এর আগে কেবল মহম্মদ আয়ুব খান এই পদে ছিলেন, যিনি পরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ফলে জল্পনা শুরু হয়—মুনিরও কি একই পথে হাঁটবেন? যদিও প্রকাশ্যে তিনি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি তাঁর কোনও আগ্রহ নেই।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুনির একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে তিনি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভারত বাঁধ বানাক, আমরা অপেক্ষা করব। কাজ শেষ হলে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ওটা ধ্বংস করব।” এমনকি ভারতকে বিলাসবহুল মার্সেডিজ গাড়ির সঙ্গে তুলনা করে পাকিস্তানকে নুড়িভর্তি ট্রাক হিসেবে চিত্রিত করেন তিনি। তাঁর মতে, “ট্রাক যদি মার্সেডিজে ধাক্কা দেয়, ক্ষতিটা কার বেশি হবে?”
তবে ভারতের পাল্টা হামলা পাকিস্তানের অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছে। বৈসরন উপত্যকার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জেরে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় এবং একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। পাকিস্তানও পাল্টা হামলার চেষ্টা করলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভেস্তে যায়। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানি সেনার এই দুর্বলতা আলোচনার কেন্দ্রে আসে।
প্রাক্তন কূটনীতিক জি. পার্থসারথির মতে, আসিম মুনির আসলে ধর্মান্ধ এবং ভুয়ো বীরত্বের আড়ালে নিজের দুর্বলতা ঢাকতে চাইছেন। কয়েক বছর আগে তিনি সেনা আদালতে বিচারাধীন ছিলেন, সেই কাঁটা এখনও তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাই ঘন ঘন হুঙ্কার দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন মুনির।
সব মিলিয়ে, যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদের স্বপ্নের কথা বললেও আসিম মুনিরের অতীত কর্মকাণ্ড বার বার প্রশ্ন তোলে—তিনি আসলেই কি যোদ্ধা, নাকি শুধু মুখে ‘জগৎ জয়’-এর বুলি আওড়ানো এক সেনাপ্রধান?
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি জ়েলেনস্কি, তবে আগাম শর্তে নয়

