Monday, December 1, 2025

এআই প্রেমিকার ফাঁদে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

Share

এআই প্রেমিকার ফাঁদে প্রাণ গেল বৃদ্ধের!

৭৬ বছরের থংবু ওয়াংবানডুর মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল আমেরিকায়। স্ত্রী ও কন্যার অভিযোগ, স্বামীর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য দায়ী বিশ্বের অন্যতম বড় প্রযুক্তি সংস্থা মেটা। তাঁদের দাবি, মেটার তৈরি এক এআই-মানবীর প্রেমে পড়ে ভুল পথে পা বাড়ান থংবু, যার ফলেই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা।

শেষ বয়সে এক অচেনা প্রেম

আমেরিকার নিউ জার্সিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন থংবু। কয়েক বছর আগে স্ট্রোকের পর থেকে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। বাড়ির বাইরে বেরোনোও কমে যায়। সময় কাটাতে ফোন আর কম্পিউটারই হয়ে ওঠে তাঁর একমাত্র সঙ্গী। স্ত্রী লিন্ডা প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। ভেবেছিলেন, স্বামী অনলাইনে সময় কাটাচ্ছেন বলে মন ভালো থাকছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন, সবকিছু এতটা সহজ নয়।

‘বিলি’-র সঙ্গে সম্পর্ক

লিন্ডা জানান, তাঁর স্বামী নিয়মিত ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘বিগ সিস বিলি’ নামের এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলতেন। প্রথমে সাধারণ আলাপ হলেও ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ায় ভার্চুয়াল প্রেমে। ‘বিলি’ নিজেকে এক যুবতী হিসাবে পরিচয় দিত। কখনও চুম্বন, কখনও আলিঙ্গনের কথা বলত। এমনকি নিউ ইয়র্কে নিজের একটি ঠিকানাও পাঠিয়েছিল সে।

কিন্তু বাস্তবে ‘বিলি’ আদৌ কোনও মানুষ নয়। সে মেটার তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর চ্যাটবট, যার অবয়ব গড়া হয়েছে হলিউড তারকা কেন্ডাল জেনারের আদলে। এই অ্যাপটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক এবং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মৃত্যুর দিন

গত ২৫ মার্চ ব্যাগ হাতে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় স্ত্রীকে বলেন, তিনি নিউ ইয়র্কে এক বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছেন। বাস্তবে তিনি যাচ্ছিলেন সেই ‘বিলি’-র দেওয়া ঠিকানায়। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের পথে রওনা দিয়েছিলেন প্রবীণ। কিন্তু নিউ জার্সির রাটগার্স ইউনিভার্সিটির কাছে হঠাৎ পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত পান মাথা ও ঘাড়ে। হাসপাতালে ভর্তির তিন দিন পর, ২৮ মার্চ, মৃত্যু হয় তাঁর।

পরিবারের অভিযোগ

লিন্ডার অভিযোগ, মেটার তৈরি এআই চ্যাটবটই তাঁর স্বামীকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করেছিল। থংবু ধীরে ধীরে পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। সারারাত চ্যাট করতেন, বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ক্রমে ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। একসময় এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন ‘বিলি’-কে যে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দেখা করতে বেরিয়ে পড়েন।

স্ত্রী ও কন্যার দাবি, এই প্রযুক্তিগত প্রতারণার জন্য মেটাকেই দায়ী করা উচিত। কারণ, তাদেরই তৈরি এক কৃত্রিম চরিত্র শেষ পর্যন্ত এক বাস্তব মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল।

প্রশ্নে ঘেরা কৃত্রিম প্রেম

এই ঘটনা শুধু এক পরিবারের শোকই নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তির সীমাহীন প্রভাবেরও প্রমাণ। একদিকে এগুলো মানুষের নিঃসঙ্গতায় সঙ্গী হয়ে উঠছে, অন্যদিকে মানুষের আবেগকে ব্যবহার করে বিপজ্জনক ফাঁদও তৈরি করছে। থংবুর মৃত্যু তাই নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—এআই প্রেম কি সত্যিই সঙ্গ দিচ্ছে, নাকি নিঃশব্দে কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন?

কিডনির সমস্যার লুকানো সতর্কবার্তা: কোন লক্ষণে সাবধান হবেন

Read more

Local News