স্বামীজির স্মৃতিচারণায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা!
কামারপুকুরে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে আবার গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি শিলান্যাস করলেন মঠের নতুন অতিথি নিবাস, ভোগঘর এবং পার্কিং সেন্টারের। সেই মঞ্চ থেকেই তিনি স্মরণ করলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, সারদা মা-সহ বাংলার গৌরবময় মনীষীদের—যাঁদের সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা বাংলাভাষাতেই রচিত।
স্বামী বিবেকানন্দের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “স্বামীজি বাংলায় কথা বলতেন। আজ কেউ কেউ বলছেন, বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই। এটা আমি মানতে পারি না।” তাঁর মন্তব্যে ছিল তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং স্পষ্ট বার্তা—বাংলাকে অবজ্ঞা করা চলবে না। তিনি আরও বলেন, “বাংলা ছাড়া ভারত হয় না। বাংলা ভাষার অসম্মান আমি সহ্য করব না।”
রামকৃষ্ণের ‘কথামৃত’ ও বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে মমতা জানান, এই মহান ব্যক্তিত্বরা যে কেবল বাংলায় কথা বলতেন, তাই নয়—তাঁদের ভাবনাতেও ছিল সম্প্রীতি ও মানবতার বার্তা। সেই ভাবনাকেই সামনে রেখে তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনও ভাগাভাগি নেই। ধর্ম, জাতি, ভাষা—সব কিছুর ঊর্ধ্বে আমরা মানুষ।”
ভাষার প্রশ্নে বিজেপির নাম না করে কড়া সমালোচনা করে মমতা বলেন, “বাংলা ভাষা নিয়ে খেলা করবেন না। অসম্মান করবেন না। এটা শুধু ভাষা নয়, আমাদের আত্মপরিচয়।”
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার ঘটনাগুলির প্রসঙ্গ টেনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারও বাংলায় কথা বলার অপরাধে আটক হওয়া, কারও আবার ‘বাংলাদেশি’ তকমা পাওয়া—এই ঘটনাগুলিকে তিনি ‘বাঙালির অস্তিত্বে আঘাত’ বলেই ব্যাখ্যা করেন। আগেও ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার ডাক দিয়েছিলেন। এ দিনও সেই বার্তা পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।
মমতা জানান, ছোটবেলা থেকেই তাঁর পরিবার তাঁকে রামকৃষ্ণ-সারদা-স্বামীজির আদর্শে বড় করেছেন। তাই তিনি বলেন, “এই শিক্ষাগুলো আমার ব্রেনে আছে—এগুলো কোনওদিন ড্রেনে যাবে না।”
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাও এদিন উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। কামারপুকুর এলাকার উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠনের ঘোষণা করেন তিনি। একই সঙ্গে এই এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথাও জানান।
এই ভাষণ ছিল শুধুই একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়—বরং বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পক্ষ নিয়ে এক শক্তিশালী অবস্থান। কামারপুকুরের পবিত্র মাটিতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের মনে করিয়ে দিলেন, বাঙালি তার আত্মপরিচয় নিয়ে কোনও আপস করবে না। ভাষা ও ঐক্যের এই বার্তা ভবিষ্যতের পথচলায় বারবার ফিরে আসবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
প্রোটিন খেয়ে মেদ ঝরাতে গিয়ে বেড়ে যেতে পারে ওজন, কোন ভুলে এমন হতে পারে?

