টেস্ট ক্রিকেটে ঐতিহাসিক রেকর্ড
টেস্ট ক্রিকেট, যেখানে একসময় ব্যাটারদের ধৈর্য আর বোলারদের নৈপুণ্যের মাপজোক হত, সেই খেলার রূপ এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ব্যাটাররা এখন শুধু টিকে থাকার জন্যই নয়, রান পাহাড় গড়ার জন্যও নামেন। আর ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ যেন সেই কথারই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
১৪১ বছরের ইতিহাসে নজির
১৮৮৪ সালে টেস্ট সিরিজ চালু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম কোনও সিরিজে ৯ জন ব্যাটার ৪০০ বা তার বেশি রান করেছেন। এর আগে কখনও ৮ জনের বেশি ব্যাটারের রান এতটা হয়নি। ১৯৭৫-৭৬-র ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ও ১৯৯৩ অ্যাশেজে ৮ জন ব্যাটার ৪০০ পার করেছিলেন। কিন্তু এবার সেই সংখ্যাকে পেরিয়ে গেল ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ।
ভারতীয় ব্যাটারদের দাপট
এই রেকর্ড গড়ার পেছনে বড় ভূমিকা নিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। তালিকায় পাঁচ জন ভারতীয় রয়েছেন—
- শুভমন গিল: ৫ ম্যাচে ৭৫৪ রান, ৪টি শতরান। ধারাবাহিকতায় তিনি পুরো সিরিজে শাসন করেছেন।
- কেএল রাহুল: ৫৩২ রান, করেছেন ২টি শতরান ও ২টি অর্ধশতরান। ইংল্যান্ডের মাটিতে এমন রূপে দেখা গেছে খুব কম বার।
- রবীন্দ্র জাডেজা: ৫১৬ রান, বল হাতে কার্যকরী হলেও ব্যাটে ছিলেন আরও বেশি সফল।
- ঋষভ পন্থ: ৪৭৯ রান, তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং মানসিকতা এই সিরিজেও বদলায়নি।
- যশস্বী জয়সওয়াল: ৪১১ রান, তরুণ এই ওপেনার ভবিষ্যতের বড় ভরসা হয়ে উঠছেন।
ইংল্যান্ডের পাল্টা জবাব
তবে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররাও পিছিয়ে ছিলেন না। চার জন ব্যাটার রেকর্ড তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন—
- জো রুট: ৪৮৩ রান, বরাবরের মতো ইংল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য মুখ।
- বেন ডাকেট: ৪৬২ রান, যেভাবে তিনি বোলারদের চাপে ফেলেছেন, তাতে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
- হ্যারি ব্রুক: এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪৫১ রান, ভবিষ্যতের স্টার হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
- জেমি স্মিথ: ৪৩২ রান পর্যন্ত পৌঁছেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোয় তাঁর ইনিংস ম্যাচে গতি এনেছে।
কীভাবে সম্ভব হল এই রেকর্ড?
এই অসাধারণ রেকর্ডের পিছনে রয়েছে আধুনিক ব্যাটিং কৌশল, আগ্রাসী মানসিকতা এবং ব্যাটারদের কন্ডিশন অনুযায়ী দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। পাশাপাশি, ইংল্যান্ডের পিচগুলিও কিছুটা ব্যাটারদের পক্ষে ছিল, যেখানে বোলারদের দুর্ভোগ চোখে পড়েছে।
উপসংহার
লাল বলের ক্রিকেটেও যে ব্যাটারদের আধিপত্য বিস্তার সম্ভব, তা আরও একবার প্রমাণ করল ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ। ১৪১ বছরের পুরনো ইতিহাসে এই নজির শুধু ব্যাটারদের দক্ষতার সাক্ষ্যই দেয় না, বরং ভবিষ্যতের টেস্ট ক্রিকেটে কীভাবে খেলাটির চরিত্র বদলাচ্ছে, তারও ইঙ্গিত দেয়।
এই রেকর্ড ভবিষ্যতে ভাঙা যেতে পারে কিনা, তা সময় বলবে। তবে আপাতত এই ঐতিহাসিক সিরিজ ক্রিকেট ইতিহাসে রয়ে যাবে এক মাইলফলক হিসেবেই।

