রাশিয়া থেকে তেল কমলে দেশ কী হারাবে, কী পাবে?
গত কয়েক বছরে ভারত যে পরিমাণে রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, তা শুধু দেশের জ্বালানি বাজারকে স্থিতিশীল রাখেনি, বিপুল মুনাফাও এনে দিয়েছে বিভিন্ন তেল পরিশোধন সংস্থাকে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপে সেই তেল আমদানিতে টান পড়তে চলেছে। এর ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে—তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।
রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে আমেরিকার অসন্তোষের মুখে পড়েছে ভারত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে এবং রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য আলাদা করে ‘জরিমানা’ দিতে হতে পারে। ফলে নয়াদিল্লি যদি বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে কম তেল কেনে, তাহলে জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে বিপুল হারে—বার্ষিক প্রায় ৯০০ থেকে ১১০০ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৮ থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই চাপে পড়বে দেশের তেল সংস্থাগুলি। কারণ, রাশিয়া যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তেল বিক্রির দাম অনেক কমিয়ে দিয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারত রাশিয়া থেকে খুব সামান্য পরিমাণে তেল আমদানি করত (মাত্র ০.২ শতাংশ)। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫–৪০ শতাংশে। এই সস্তা তেলের জোগানেই দেশীয় সংস্থাগুলি পেট্রল-ডিজেল তৈরি করে রফতানি করেছে বিদেশে, এমনকি সেই সব দেশেও, যারা রাশিয়ার তেল কিনতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে লাভ হয়েছে বহু সংস্থার, যেমন রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নায়ারা এনার্জি।
কিন্তু এই সুবিধার দিন হয়তো ফুরাতে চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে রাশিয়ার তেলজাত পণ্য নিষিদ্ধ করতে পারে। ফলে রাশিয়ার তেল নিয়ে তৈরি দ্রব্য ইউরোপে রফতানি করা যাবে না। আবার আমেরিকা চাপ দিলে তেল আমদানির উৎস বদলাতেও হবে। রাশিয়া ছাড়া অন্য দেশ থেকে তেল আনলে ব্যারেল প্রতি প্রায় ৫ ডলার বেশি খরচ হবে, অর্থাৎ ১৮ লক্ষ ব্যারেল দৈনিক আমদানি করলে বছরে অতিরিক্ত ৯৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে।
রিলায়্যান্সের মতো বড় সংস্থাগুলি অবশ্য বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছে। তারা পরিকল্পনা করছে এক শোধনাগারে রাশিয়ার তেল প্রক্রিয়াকরণ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশে রফতানি এবং অন্য শোধনাগারে মধ্যপ্রাচ্যের তেল প্রক্রিয়া করে ইউরোপে পাঠানোর। তবে এতে খরচ ও পরিবহণ সময়—দু’টোই বাড়বে।
সব মিলিয়ে, ভারত রাশিয়ার সস্তা তেল থেকে সরে গেলে শুধু আমদানি ব্যয় নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি মূল্যও চড়চড় করে বাড়তে পারে। পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় এবং সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির উপর। তাই এই পরিস্থিতিকে অনেকেই বলছেন, “উভয় সংকট”—একদিকে আন্তর্জাতিক চাপ, আর অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। ভারতের সামনে এখন কূটনৈতিক কৌশলে সামাল দেওয়াই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

