Monday, December 1, 2025

তাইল্যান্ডে মার্কিন ঘাঁটির সম্ভাবনা: চিনের দোরগোড়ায় নতুন কূটনৈতিক চাপা উত্তেজনা

Share

তাইল্যান্ডে মার্কিন ঘাঁটির সম্ভাবনা!

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভূরাজনীতির তরঙ্গে নতুন আলোড়ন। থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ফাং নাগা অঞ্চলে একটি সম্ভাব্য মার্কিন সেনাঘাঁটি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এই সম্ভাবনা চিনের জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

জানা যাচ্ছে, মার্কিন সেনা বাহিনী ফাং নাগা এলাকায় একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরির কথা ভাবছে। এটি বাস্তবায়িত হলে চিনের দক্ষিণাঞ্চল— যেমন ইউনান, গুয়াংজি, এমনকি জিনজিয়াং পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় চলে আসবে। ফলে চিনের উদ্বেগ বেড়েছে বলেই ধারণা।

তবে, এই জল্পনার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে থাইল্যান্ডের প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “কোনও বিদেশি শক্তিকে সামরিক ঘাঁটি তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই এসব গুজব ছড়াচ্ছে।”

এদিকে, থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে এই ইস্যু বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, মার্কিন ঘাঁটি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হলে দেশটি চিন-আমেরিকা ঠান্ডা যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে যাবে। কেউ কেউ ইউক্রেনের উদাহরণ টেনে বলছেন, এমন পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

তবে এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সমীকরণও। থাইল্যান্ড সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ২০ বছরের একটি চুক্তি করেছে। আবার তাদের রপ্তানি পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপানো ৩৬% শুল্কও এখন মাথাব্যথা। এসবের জেরে থাই সরকার মার্কিন স্বার্থে নরম হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

অতীতেও থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক ছিল। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে থাই ভূখণ্ডে সাতটি মার্কিন ঘাঁটি ছিল। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় রাজনীতির চাপেই ধীরে ধীরে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় পেন্টাগন।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পার্ল হারবার, গুয়াম ও দিয়েগো গার্সিয়ার মতো শক্তিশালী ঘাঁটি থাকলেও সেগুলো চিনের উপকূল থেকে অনেক দূরে। তাই সংহতির সময় মার্কিন সেনার পক্ষে এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। ফাং নাগা সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।

তবে সেনাঘাঁটি নির্মাণ মানেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসা, রিসর্ট এলাকা এবং পরিবেশগত প্রভাব নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়া কিংবা মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কেও প্রভাব পড়তে পারে।

এই মুহূর্তে থাইল্যান্ডে মার্কিন সেনাঘাঁটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সরকার যতই অস্বীকার করুক, বারবার ঘুরে আসছে সেই প্রশ্ন— যদি এমন ঘাঁটি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নয়, গোটা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতির ছবিই পাল্টে দিতে পারে।

অলিম্পিক্স ক্রিকেটে বাদ পড়ার শঙ্কায় পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড, আইসিসি নিয়ম নিয়ে দুই দেশের ক্ষোভ

Read more

Local News