চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নতুন ত্রিদেশীয় জোট!
গত কিছুদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে একটি নতুন ত্রিদেশীয় জোট নিয়ে খবর আলোচনায় এসেছে। চিন ও পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি নতুন জোট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো সেই প্রস্তাবে স্বচ্ছন্দ বা আগ্রহ প্রকাশ হয়নি। বরং ঢাকার সরকার মুলত এই ধরনের ত্রিদেশীয় জোটে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করছে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল থেকে জানা গেছে, বেজিং যথেষ্ট কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেও ঢাকাকে এই জোটে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। গত জুন মাসে চিনের কুনমিঙে অনুষ্ঠিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেই প্রথম এই জোট গঠনের কথা উঠেছিল। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন চিনের উপবিদেশমন্ত্রী, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী বিদেশ সচিব এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত বিদেশ সচিব। যদিও বাংলাদেশের সরকার পরিস্কার জানিয়েছে, তারা এখনই এমন কোনো রাজনৈতিক জোটে যুক্ত হতে চায় না। বেজিং ওই বৈঠককে সরকারি বৈঠক হিসেবে উল্লেখ করলেও, রাজনৈতিক কিছু নয় বলেও জানিয়েছে ঢাকা।
পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আয়োজিত আসিয়ান সম্মেলনের পার্শ্ব বৈঠকে চিনা ও বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিকদের মধ্যে এই বিষয়টি আবারও আলোচনার বিষয় হয়। চিনের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই জোট ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোকেও যুক্ত করার সুযোগ থাকবে এবং বাংলাদেশেরও এতে সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত। তবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি তৌহিদ হোসেন এর ব্যাপারে স্পষ্ট কোন মন্তব্য করেননি, কেবল মৃদু হাসি দিয়ে কথা শুনেছেন।
এরপর গত ২১ জুলাই ঢাকায় নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বৈঠকে আবারও জোট প্রসঙ্গ উঠে। বেজিং আশা প্রকাশ করেছে, সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিতব্য ওই জোটের প্রথম যৌথ কাজকর্ম বৈঠকে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু ঢাকার অবস্থান এখনো অনড়; তারা ত্রিদেশীয় এই নতুন উদ্যোগে এখনই যুক্ত হতে আগ্রহী নয়।
এর পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার বহুদেশীয় গোষ্ঠী সার্কের দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা। সার্কে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ মোট আটটি দেশ থাকলেও নানা কারণে এই গোষ্ঠী গত কয়েক বছর থেকে কার্যত স্তব্ধ। ভারতের প্রতিবাদের কারণে ২০১৬ সালের পর থেকে সেখানে কোন সম্মেলন হয়নি, এবং বাংলাদেশ ও অন্যান্য কয়েকটি দেশও এতে অংশগ্রহণ বন্ধ করেছে। এই পরিস্থিতিতে এশিয়ায় নতুন কোনও জোট গঠন করতে চাওয়ার পেছনে চীনের আগ্রহ স্বাভাবিক, কিন্তু ঢাকার জন্য এই নতুন জোটে যুক্ত হওয়া এখনো ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
সবমিলিয়ে, বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট যে, তারা এই মুহূর্তে চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে গঠনযোগ্য ত্রিদেশীয় জোটে যুক্ত হতে চায় না। বেজিং অবশ্য বিভিন্ন পর্যায়ে চাপ তৈরি করে এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ঢাকার পক্ষে এখনো সাড়া দেওয়া হয়নি। সামনের দিনগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার এই জোট বিষয়ক রাজনীতি কেমন রূপ নেয়, তা সময়ই বলবে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা উচিত ভারতের? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যুক্তিতে কী আছে

