আমেরিকার বাজারে ভারতের স্মার্টফোন দখল!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন বাজারে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে ভারত। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ স্মার্টফোন এখন আমেরিকার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে, যার ফলে বড় ধাক্কা খাচ্ছে চিনের রফতানি ব্যবসা। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমেরিকায় আমদানি হওয়া প্রতি তিনটি স্মার্টফোনের মধ্যে একটি ভারতের তৈরি।
এই তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করেছে আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ভারত থেকে আমদানি ৩ গুণ বেড়ে গিয়েছে। ২০২৪ সালে ভারতের তৈরি স্মার্টফোনের মার্কিন বাজারে অংশ ছিল ১১ শতাংশ, যা এ বছর পৌঁছে গিয়েছে ৩০ শতাংশে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তরের হিসেবে, জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ২ কোটি ১৩ লক্ষ স্মার্টফোন আমদানি করেছে আমেরিকা, যার বাজারমূল্য প্রায় ৯৩৫ কোটি ডলার। গত বছর এই অঙ্ক ছিল ৭০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে ১৮২ শতাংশ বৃদ্ধির নজির গড়েছে ভারত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে অ্যাপল। একসময় তারা শুধু চিনে আইফোন তৈরি করত। কিন্তু এখন তারা ধীরে ধীরে সেই উৎপাদন সরিয়ে আনছে ভারতে। মার্চ মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক সিদ্ধান্ত নেন, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে আমেরিকায় ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ আইফোন রফতানি করা হবে। সেই অনুযায়ী ভারতের কারখানায় জোরদারভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে।
বর্তমানে অ্যাপলের বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ২০ শতাংশই হচ্ছে ভারতে। এই ধারা ধরে রাখতে কেন্দ্র সরকার চালু করেছে ‘প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ’ (PLI) প্রকল্প, যাতে বৈদেশিক কোম্পানিগুলো ভারতে উৎপাদনে উৎসাহ পায়। এর ফলে শুধু অ্যাপল নয়, আরও অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ভারতে উৎপাদনকেন্দ্র গড়ে তুলছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিবর্তনে সন্তুষ্ট নন। তিনি চান, আইফোন যেন আমেরিকার মাটিতেই তৈরি হয়। অ্যাপল যদি তা না করে, তবে তিনি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তবে টিম কুক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ভারতের মতো দেশ থেকে উৎপাদন সরাতে নারাজ।

এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প নিজেই একটি ‘মেড ইন ইউএসএ’ স্মার্টফোন বাজারে আনার ঘোষণা করেছেন। এই ফোনের নাম রাখা হয়েছে ‘T1’, যার দাম ৪৯৯ ডলার (প্রায় ৪৩ হাজার টাকা)। এতে থাকবে উন্নত প্রযুক্তি ও বিশেষ ডেটা প্ল্যান। যদিও বিশ্লেষকরা সন্দিহান, এই ফোন কতটা জনপ্রিয় হবে, কারণ বর্তমানে একই পরিষেবা অনেক কম দামে পাওয়া যায়।
চিনের অবস্থান এখনো শীর্ষে থাকলেও তার রফতানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে চিন থেকে আমদানি কমেছে ২৭ শতাংশ। আর ভারতের দ্রুত উত্থানে তারা পড়েছে রীতিমতো চাপে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ সালে ভারতে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ২টি, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩০০-তে। উৎপাদন মূল্য ২৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ছুঁয়েছে ৫.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা, আর রফতানি বেড়েছে ১২৭ গুণ।
সাফ বলা যায়, ভারতের স্মার্টফোন শিল্প এখন শুধু ঘরের বাজার নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ক্রমশ দখল নিচ্ছে — যার শীর্ষ উদাহরণ আমেরিকার বাজার।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা উচিত ভারতের? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যুক্তিতে কী আছে

