ওবিসি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে প্রশ্ন!
পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) তালিকা নিয়ে চরম বিতর্কের মধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার দেশের শীর্ষ আদালতে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন, প্রধান বিচারপতি দিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে— “হাই কোর্ট কীভাবে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছল?”
‘আশ্চর্যজনক’ বলল সুপ্রিম কোর্ট
প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়। সংরক্ষণ তো এক্সিকিউটিভ বা প্রশাসনিক স্তরের সিদ্ধান্ত। হাই কোর্ট কী যুক্তিতে তা স্থগিত করল, সেটাই আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।” পাশাপাশি, বিচারপতি আরও বলেন, যদি প্রয়োজন হয়, মামলাটি হাই কোর্টের অন্য বেঞ্চে পাঠিয়ে দ্রুত শুনানির নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
হাই কোর্টের পূর্ববর্তী রায় ও বিতর্ক
২০১০ সালের পর রাজ্য সরকার যে ওবিসি শংসাপত্র দিয়েছিল, তা বাতিল করে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের মতে, কোনও সামাজিক বা আর্থিক সমীক্ষা ছাড়াই এই তালিকা তৈরি হয়েছিল। হাই কোর্ট বলে, নতুন করে বিস্তারিত সমীক্ষা করে তারপরেই ওবিসি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। এর জেরেই রাজ্য সরকারের তৈরি করা সাম্প্রতিক তালিকার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত ঘোষিত ৬৬টি জনগোষ্ঠীর ওবিসি শংসাপত্র বৈধ থাকলেও, পরে যুক্ত হওয়া ৭৭টি সম্প্রদায়ের শংসাপত্র বাতিল হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের ছিল। রাজ্য দাবি করেছিল, এই সিদ্ধান্তের জেরে কলেজে ভর্তি থেকে সরকারি চাকরির নিয়োগ— সব কিছুতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
রাজ্যের প্রতিক্রিয়া ও সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান
এই অবস্থায় রাজ্য সরকার নতুন করে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসেবে ঘোষণা করে। জানানো হয়, এই তালিকা ধর্ম নয়, আর্থিক ও সামাজিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এই তালিকার বিরুদ্ধেই ফের মামলা দায়ের হয়।
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, হাই কোর্টের নির্দেশ আপাতত “প্রাথমিক ভাবে ভুল” বলেই মনে করছে তারা। তাই, হাই কোর্টের রায়ের উপরে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এই মামলার চূড়ান্ত রায় পরে শোনানো হবে বলে জানায় শীর্ষ আদালত।
এখন কী হতে পারে?
সুপ্রিম কোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছে, মামলাকারী চাইলে হাই কোর্টের অন্য বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য পাঠানো যেতে পারে। শীর্ষ আদালত প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দ্রুত শুনানি শেষ করারও পরামর্শ দিতে পারে। তবে মামলাকারীরা জানিয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টেই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায়।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন ও শিক্ষাক্ষেত্রে এক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ওবিসি তালিকা নিয়ে রাজনীতি, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং আইনি ব্যাখ্যার জটিলতা এখন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে। আপাতত হাই কোর্টের রায় স্থগিত থাকায় কিছুটা স্বস্তি মিললেও, বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা উচিত ভারতের? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যুক্তিতে কী আছে

