গাজার দেইর আল-বালাহ এখন কিছুটা শান্ত!
দীর্ঘ দিনের তীব্র হামলা, ধ্বংস, রক্তপাত আর কান্নার পরে অবশেষে একটুও যেন নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছে গাজার দেইর আল-বালাহ। ইজরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণ আর সামরিক অভিযানে প্রায় ছারখার হয়ে যাওয়া এই জনপদে গত ক’দিন ধরেই তেমন কোনও বড়সড় হামলার খবর নেই। তাই ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো একটু আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন।
গত আট মাস ধরে গাজার উপর চলা ইজরায়েলি সেনার নির্বিচার বোমাবর্ষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির একটি হয়ে উঠেছিল দেইর আল-বালাহ। এই মধ্য গাজার শহরটি ছিল প্রায় প্রতিদিনের লক্ষ্যবস্তু। হাসপাতাল, স্কুল, ঘরবাড়ি—সব কিছুই একের পর এক ভেঙে পড়ছিল চোখের সামনে। অনেকে হারিয়েছেন প্রিয়জন, অনেকে এখনও খুঁজে ফেরেন স্বজনের দেহ।
তবে সম্প্রতি ইজরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এবং রাফা এলাকায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করায় দেইর আল-বালাহে বোমাবর্ষণ কিছুটা কমেছে। ফলে এলাকার বাসিন্দারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিজেদের ভাঙা বাড়িগুলি মেরামতির চেষ্টা করছেন। কোথাও আবার স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার ও ওষুধ বিলি করছেন, যেন জীবনের কিছু স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আনা যায়।
তবে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, শান্তির এই মুহূর্ত একেবারেই অস্থায়ী। আকাশে এখনও ড্রোনের গুঞ্জন, মাঝে মাঝে গোলার শব্দ—এই সবই মনে করিয়ে দেয়, যুদ্ধ থামেনি। শুধু স্থানান্তরিত হয়েছে। তাই মন থেকে আতঙ্ক এখনও কাটেনি কারও।
এই এলাকাতেই আগে আশ্রয় নিয়েছিল হাজার হাজার উদ্বাস্তু পরিবার, যাঁরা রাফা বা গাজার উত্তরের এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, দেইর আল-বালাহ তুলনায় নিরাপদ। কিন্তু বাস্তবে সেই আশ্রয়স্থলও রক্ষা পায়নি। স্কুলে স্কুলে গাদাগাদি করে থেকেছে পরিবারগুলো, একটিমাত্র টয়লেট আর বিশুদ্ধ জলের অভাবে দিন কাটিয়েছে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে গিয়েছেন। আর ইজরায়েলের চলতি যুদ্ধযন্ত্রণা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির। আন্তর্জাতিক মহল একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও এখনো পর্যন্ত সেই দাবিতে সাড়া দেয়নি ইজরায়েল সরকার।
দেইর আল-বালাহের এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা বেঁচে আছি শুধু এই বিশ্বাসে যে, একদিন না একদিন শান্তি ফিরবেই। কিন্তু কতজন আর বেঁচে থাকবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।”
এই সাময়িক স্বস্তির সুযোগে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খাদ্য, জ্বালানি, চিকিৎসার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও জটিল এবং অনিশ্চয়তায় ভরা।
যদিও যুদ্ধের কুয়াশা এখনও কাটেনি, তবু দেইর আল-বালাহের মানুষজন কিছুটা সময় পেয়েছেন নিজের মুখে মাটি লাগিয়ে দাঁড়াবার। আর সেই আশাই হয়তো আগামীর সাহস জোগাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার হৃদয়ে।
ত্বকে চাই উজ্জ্বল জেল্লা? গরমে রোজ খান এই ‘গোলাপজল মিশ্রিত পানীয়’

