ঘর গোছাতে কোমর বেঁধে নামছেন মমতা
বছরের এই একটা দিন—২১ জুলাই। তৃণমূলের কাছে শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটা এক আবেগ, এক ইতিহাস, এবং এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার উপলক্ষও। আর এই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই এবার ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের রূপরেখা দিতে চলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। বিজেপি রাজ্যে উল্লেখযোগ্য আসন সংখ্যা অর্জন করেছে। এমন সময়ে মমতা জানেন, এখন আর আবেগে ভেসে চললে হবে না। বাস্তবের মাটি ছুঁয়ে ভাবতে হবে আগামী দিনের রাজনীতি। দলকে আবার শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে হবে, মাঠে নামাতে হবে নতুন মুখ, ফেরাতে হবে জনমানসে ভরসা।
দলের রদবদলের বার্তা
শোনা যাচ্ছে, এই বছরের ২১ জুলাইয়ের ভাষণেই তৃণমূল সুপ্রিমো দিতে পারেন দলের অন্দরে বড়সড় রদবদলের ইঙ্গিত। জেলা স্তরে কর্মীদের কাজকর্ম, জনপ্রতিনিধিদের জনসংযোগ কতটা বাস্তবসম্মত হচ্ছে, তা নিয়ে এবার আরও কড়া নজরদারি হতে চলেছে। দুর্নীতির অভিযোগে কেউ ধরা পড়লে তাকে রেহাই দেওয়ার প্রশ্নই নেই—এই বার্তা দলের অন্দরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিশেষ করে যেসব এলাকায় তৃণমূলের ভোটে ধস নেমেছে, সেখানে আবারও সংগঠনকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে হবে। স্থানীয় নেতৃত্বের জবাবদিহির বিষয়টিও এবার মুখ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
নতুন মুখ, নতুন বার্তা
তৃণমূল চাইছে যুব সমাজের ভরসা ফিরিয়ে আনতে। একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে, তরুণ ভোটারদের একটা বড় অংশ বিজেপি বা অন্যান্য দলের দিকে ঝুঁকেছেন। তাই এবার হয়তো ছাত্র-যুবদের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। আবার, দলের শীর্ষ নেতৃত্বেও যুব প্রজন্মকে জায়গা দেওয়ার ভাবনা আছে বলে সূত্রের খবর।
সেই সঙ্গে, জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থানও তুলে ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪-এ কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে দূরত্ব রেখেই চলেছে তৃণমূল। এই অবস্থান আগামী দিনে কী রূপ নেবে, তাও স্পষ্ট হতে পারে এই সভা থেকে।
বিরোধীদের কড়া বার্তা
মমতা জানেন, তৃণমূলকে ঘিরে এখন প্রশ্ন অনেক—দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, সাংগঠনিক শৈথিল্য, জনসংযোগে ঘাটতি। তাই এবার মাঠে নামছেন সোজা পথে। নিজের স্টাইলে, স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেবেন—দল কী চায়, কাদের চায়, এবং কীভাবে চায়। বিরোধীদেরও এই মঞ্চ থেকেই জানিয়ে দেবেন, ‘খেলা শেষ হয়নি, আসল লড়াই তো এখন শুরু’।
জনতার কাছে ফেরা
একটা সময় ছিল, যখন মমতার জনসভা মানেই ছিল তীব্র আবেগে ভরা জনতার ঢল। সময় বদলেছে, পরিস্থিতি বদলেছে, তবে সেই বিশ্বাস ফের ফিরে পেতে চান নেত্রী। জনতার সঙ্গে ফের একবার চোখের যোগাযোগ, মানুষের সমস্যার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার—এই সব কিছুই হয়তো আবার ফুটে উঠবে তাঁর ভাষণে।
২০২৬-এর ভোট যেন আর একটা যুদ্ধ। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে সেই যুদ্ধের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ। ঘর গোছানোর ডাক, তৃণমূলের পুনর্গঠনের সংকেত, আর মমতার জাদুকাঠির স্পর্শ—সব মিলিয়ে এবারের শহিদ দিবস রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
রান্নাঘরের ধোঁয়ার গন্ধ যাচ্ছে না? ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন এই অসুবিধা

