Monday, December 1, 2025

ব্রহ্মপুত্রের বুকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ! চিনের তিব্বতে নির্মাণ শুরু ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে ভারতে

Share

ব্রহ্মপুত্রের বুকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ!

চিন এক নতুন দিগন্তে পা রাখছে। তিব্বতের ইয়ারলুং জ্যাংবো নদীতে (ভারতের ব্রহ্মপুত্র), বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বেইজিং। সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, এই প্রকল্প একদিকে যেমন চিনের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাবে, তেমনই এটি হবে পরিবেশবান্ধব শক্তির এক নতুন দৃষ্টান্ত। তবে এই পদক্ষেপ ঘিরে উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের মতো ব্রহ্মপুত্র-নির্ভর দেশগুলিতে।

কেমন হবে এই ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড়’ বাঁধ?

চিনের এই বাঁধটি নির্মিত হচ্ছে তিব্বতের মেডগ জেলা দিয়ে প্রবাহিত ইয়ারলুং জ্যাংবো নদীর উপরে, যেটি ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন হবে এই বাঁধ। তুলনায় বলা যায়, এটি ত্রি-গর্জ বাঁধ (Three Gorges Dam)-এর চেয়েও বড় হবে, যা এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।

চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে লাগবে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা, এবং এটি নির্মিত হবে একাধিক পর্যায়ে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চিনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা “পাওয়ার চায়না”-কে।

কেন চিন বানাচ্ছে এই বাঁধ?

চিনের দাবি, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে তারা দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়। তারা বলছে, এটি ১০০% ‘গ্রিন এনার্জি’—অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পথে এগোনোই তাদের লক্ষ্য।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্প কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, এর সঙ্গে রয়েছে কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক দিকও। ভারতের মতো নদী-নির্ভর দেশগুলির জল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যম হিসেবে এই বাঁধ ব্যবহার করতে পারে চিন।

ভারতের আশঙ্কা কী?

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা অসম, অরুণাচল প্রদেশে ব্রহ্মপুত্র নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি, পানীয় জল, জীববৈচিত্র্য—সবকিছুর সঙ্গে সরাসরি জড়িত এই নদী। চিন যদি এর গতিপথ বা জলপ্রবাহে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ভারতে জলের সংকট বা বন্যার আশঙ্কা থেকেই যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিনের এই বাঁধ নির্মাণ ভবিষ্যতে ভারতের জন্য বড় কৌশলগত চাপ তৈরি করতে পারে। কারণ, চিন ইতিমধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগর থেকে হিমালয়ের বিভিন্ন সীমান্তে আগ্রাসী নীতি নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের জলকেও একইভাবে ‘কূটনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বেইজিং।

আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক স্তরে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবিদ ও জলসম্পদ বিশারদরা। নদীর স্বাভাবিক গতিপথের উপর হস্তক্ষেপ করলে যে এর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে সরব হয়েছেন তারা। ভারত সরকার যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে কূটনৈতিক স্তরে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।

উপসংহার

চিনের এই বাঁধ ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে বড় ভূমিকা রাখলেও, এর ভূরাজনৈতিক প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। বিশেষ করে ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ। আন্তর্জাতিক আলোচনার মাধ্যমে এমন প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও প্রতিবেশী দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।

শিক্ষার মন্দিরে নিরাপত্তাহীনতা! দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজে পুলিশ পিকেট চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ অধ্যাপকরা

Read more

Local News