SSC নিয়োগ!
২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে ফের তোলপাড় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই এসএসসি নতুন করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তবে সেই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ উঠে আসে। শেষমেশ মামলাকারীদের আর্জির ভিত্তিতে সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দিল— ‘দাগি’ বা চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।
বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের কড়া ভাষায় নির্দেশ, যদি কোনও অযোগ্য প্রার্থী ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকেন, তবে সেই আবেদন বাতিল করতে হবে। একথাও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
কী ছিল মামলাকারীদের অভিযোগ?
শিক্ষা দফতরের তরফে গত ৩০ মে প্রায় ৪৪ হাজার শূন্যপদের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসএসসি। কিন্তু মামলাকারীদের দাবি, এই বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিরোধিতা করে। তাঁদের মতে, ২০১৬ সালের দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ নিয়ে শীর্ষ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, সেই নির্দেশ অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধুমাত্র ২০১৬ সালের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্য থেকেই করতে হবে এবং সে সময়কার বিধি মেনেই নির্বাচন করতে হবে।
অভিযোগ আরও ছিল, বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ছাড় নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি। মামলাকারীরা আদালতে দাবি করেন, ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী প্রক্রিয়া না চালিয়ে অন্যভাবে তা করার চেষ্টা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
রাজ্য ও কমিশনের অবস্থান কী ছিল?
রাজ্য সরকার এবং এসএসসি আদালতে জানায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোথাও বলা হয়নি যে ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন না। তবে আদালত এই যুক্তি মানেনি। বিচারপতি ভট্টাচার্য সাফ জানান, “কমিশনের কাছ থেকে এমন ব্যাখ্যা আশা করা যায় না।”
কী বলল হাই কোর্ট?
কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়,
- ‘দাগি’ বা অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে।
- যাঁরা ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদনপত্র বাতিল করতে হবে।
- তবে ৩০ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রক্রিয়া চালানো যাবে।
এই নির্দেশে বোঝা যাচ্ছে, বিজ্ঞপ্তির মূল কাঠামো বা অন্যান্য বিষয় আদালত প্রশ্নের মুখে ফেলেনি। কেবলমাত্র প্রার্থীদের যোগ্যতা সংক্রান্ত যে বিতর্ক ছিল, তা নিয়েই হস্তক্ষেপ করেছে আদালত।
পেছনের প্রেক্ষাপট
২০১৬ সালের টেট ও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতির অভিযোগ চলেছে। তদন্তে উঠে এসেছে বহু ‘দাগি’ প্রার্থীর নাম, যাঁদের সুপারিশ ছাড়া চাকরি হয়েছে। সেই নিয়েই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। এরপরই শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
সেই নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও, তাতেও ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় প্রতিবাদ জানিয়ে মামলায় যান একাধিক চাকরিপ্রার্থী।
এখন আদালতের নির্দেশে সেই বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এল। আদালতের কড়া রায়ে স্পষ্ট, দুর্নীতির দাগ যাঁদের উপর রয়েছে, তাঁরা আর শিক্ষকতার জন্য বিবেচ্য হবেন না।

