মহিলারা সবচেয়ে বিপন্ন, কারণ লুকিয়ে হরমোন আর উদ্বেগে
রাত জেগে কাজ করা আজকের যুগে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক অভ্যাসই কি লুকিয়ে রাখছে বড় শারীরিক বিপদের ইঙ্গিত? ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষণায় উঠে এল চমকে দেওয়ার মতো তথ্য—যাঁরা নিয়মিত নাইট শিফটে কাজ করেন, বিশেষত মহিলারা, তাঁদের হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি।
এই সমীক্ষাটি ২ লক্ষ ৭০ হাজার কর্মীর উপর চালানো হয়েছে। দেখা গেছে, পুরুষেরা তুলনায় কম প্রভাবিত হলেও, নাইট শিফটে থাকা মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই ‘সিভিয়ার অ্যাজ়মা’ বা তীব্র হাঁপানিতে আক্রান্ত। এই তথ্য এসেছে ব্রিটেনের বায়োব্যাঙ্ক থেকে প্রাপ্ত বিশ্লেষণে। দিনের শিফটে থাকা মহিলাদের তুলনায় এঁদের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এমনকি যাঁরা কখনও দিন তো কখনও রাতে কাজ করেন—তাঁদের মধ্যেও শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছে।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রাতে জেগে থাকার ফলে শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা জৈবিক ঘড়ির স্বাভাবিক ছন্দে বিঘ্ন ঘটে। ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিশেষত ফুসফুসের কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি রাতে দীর্ঘক্ষণ এয়ার কন্ডিশনড ঘরে বসে থাকা, অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, অতিরিক্ত ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের প্রবণতা হাঁপানির সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
তবে কেন এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মহিলারাই? এর পেছনে রয়েছে হরমোনজনিত কারণ। পুরুষদের শরীরে উপস্থিত টেস্টোস্টেরন হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক—এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে আগেও। মহিলাদের শরীরে এই হরমোন কম থাকায়, তাঁদের মধ্যে শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। আবার রজোনিবৃত্তির পরে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়—ফলত হাঁপানির ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায়। যাঁরা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করান, তাঁদের ক্ষেত্রেও শ্বাসকষ্টের আশঙ্কা বেশি।
এই সবের পাশাপাশি মনোবিদরা তুলে ধরেছেন মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠার বিষয়টিও। রাত জেগে কাজ করার সময় উদ্বেগ, ক্লান্তি এবং ভয়—এই সবকিছু মিলে তৈরি করে এক ধরনের মানসিক চাপ, যা ‘প্যানিক ডিজ়অর্ডার’ বা অ্যাংজ়াইটি নিউরোসিসে রূপ নিতে পারে। দেখা গেছে, যাঁরা অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগেন, তাঁদের প্রায় ২৫ থেকে ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই শ্বাসকষ্ট অনুভব হয়, যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞান কোনও শারীরিক ব্যাখ্যা খুঁজে পায় না। এমনই তথ্য উঠে এসেছে দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’-এর গবেষণায়।
সব মিলিয়ে গবেষকদের বার্তা একটাই—নাইট শিফটে কাজ করলে অবশ্যই প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, ও সময়মতো বিশ্রাম। না হলে শ্বাসকষ্ট আর হাঁপানির মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েই চলবে।
বৃষ্টির দিনে ঘন ঘন লোডশেডিং? খাবার নষ্ট হওয়ার আগে অবলম্বন করুন এই সহজ কৌশলগুলি

