শমীক ভট্টাচার্যের প্রত্যাবর্তনের গল্প!
দীর্ঘদিন ধরে দলে কোণঠাসা হয়ে থাকা শমীক ভট্টাচার্য আজ রাজ্য বিজেপির সর্বোচ্চ সংগঠনিক পদে। তাঁর এই উত্থান শুধু বিস্ময় নয়, বরং রাজনৈতিক কৌশলের নিখুঁত প্রয়োগ। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘কলকাতার মুখ’ হিসেবে তাঁকে সামনে এনে বিজেপি আবারও শহুরে ভোটারদের দিকে ঝুঁকেছে।
রাজনীতির ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, কলকাতার সঙ্গে নিবিড় যোগ থাকা নেতারাই বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছেন— হোক তা জ্যোতি বসু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই তালিকায় শমীকও নতুন সংযোজন। তাঁর শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভাবমূর্তি কলকাতা, রাজারহাট ও দুর্গাপুরের মতো এলাকায় দলকে শক্ত ভিত্তি গড়তে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বহুদিন ধরেই সংবাদমাধ্যমে বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত শমীক, দলের বক্তব্য দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। বিরোধী নেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক দলের মধ্যে সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও বাড়তি সুবিধা এনে দেবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
শমীকের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের হাত ধরে। ২০০৬ সালে শ্যামপুকুর থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হারলেও ২০১৪ সালে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে বিজেপির ইতিহাসে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নেন। কিন্তু এরপর দলে অন্তর্ঘাত, প্রার্থিতার বিতর্ক এবং নীরব উপেক্ষা— সব কিছুই মিলিয়ে তাঁকে প্রায় আড়ালে ঠেলে দেওয়া হয়।
তবুও কখনও দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি শমীক। বরং নিজের নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও আদর্শ নিয়ে দলেই থেকেছেন। এমনকি তৃণমূলের প্রস্তাব এবং মন্ত্রিত্বের লোভও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। দলীয় বিশ্বস্ততা এবং সংগঠনের প্রতি আনুগত্যই তাঁকে রাজ্য সভাপতির আসনে ফিরিয়ে আনল বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যসভায় যাওয়ার পরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা আবারও তাঁর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন বাংলার বিজেপিকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে। দলীয় ঘাঁটি শক্ত করা, শহুরে ভোটে আস্থা ফিরে পাওয়া এবং কর্মসংস্থানের মতো বিষয়কে সামনে রেখে ২০২৬-এর লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিনি।
এক সময়ের কোণঠাসা নেতা আজ দলের মুখ— এই উত্থান নিছক রাজনৈতিক নয়, বরং আদর্শ আর ধৈর্যের জয়ের গল্প।
বৃষ্টির দিনে ঘন ঘন লোডশেডিং? খাবার নষ্ট হওয়ার আগে অবলম্বন করুন এই সহজ কৌশলগুলি

