শিশুর চোখে ছানি?
ছানি শব্দটা শুনলেই বয়সের ছবিই চোখে ভেসে ওঠে। মনে হয়, বার্ধক্যে পৌঁছলেই চোখে ধরা পড়বে এই অসুস্থতা। অথচ অবাক করা বিষয় হল, সদ্যোজাত শিশুও জন্ম নিতে পারে চোখে ছানি নিয়ে! কলকাতায় এখন সেই জটিল সমস্যার অস্ত্রোপচার করে নতুন আলো ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেক শিশুর চোখে।
চোখের ছানি মূলত চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা নষ্ট হওয়া। লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশ করে রেটিনায় পৌঁছয়। কিন্তু যখন সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে চোখের সামনে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা ধীরে আসে, কিন্তু শিশুরা যখন দৃষ্টি গঠন করতে শিখছে, সেই সময়েই যদি ছানি পড়ে, তা হলে ভবিষ্যতের দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।
শিশুর ছানির লক্ষণ ও ধরন
এক বছরের মধ্যে জন্মালে তাকে বলে কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট, ১ বছরের মধ্যে ধরা পড়লে ইনফ্যান্টাইল ক্যাটারাক্ট, আর ৫-৬ বছর বয়সে দেখা দিলে হয় ডেভেলপমেন্টাল ক্যাটারাক্ট। বোর্ডে লেখা দেখতে অসুবিধা হওয়া, চোখ ট্যারা হয়ে যাওয়া, টিভি একদম সামনে থেকে দেখা, ঘন ঘন চোখের পাতাও ফেলা—সবই ছানির উপসর্গ হতে পারে। সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে চোখের মণিতে সাদা পর্দা দেখা দিলেই সতর্ক হওয়া জরুরি।
ছানির কারণ কী?
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণ (রুবেলা, সাইটোমেগালো), অপুষ্টি, ক্রনিক রোগ (ডায়াবিটিস, থাইরয়েড), বংশগত জিনগত ত্রুটি অথবা প্রসবকালীন আঘাত—সব কিছু থেকেই শিশুর চোখে ছানি পড়তে পারে।
চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার
বড়দের মতো শিশুরাও ছানির একমাত্র চিকিৎসা হল অস্ত্রোপচার। তবে তার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে (৬ সপ্তাহের বেশি বয়স হলেই) অস্ত্রোপচার জরুরি, না হলে চোখের গঠনই ঠিকমতো হবে না। এক চোখে ছানি হলে ‘ইউনিল্যাটারাল’ ও দুই চোখে হলে ‘বাইল্যাটারাল’ ক্যাটারাক্ট বলা হয়।
শিশুর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারে সাধারণত প্রথমেই লেন্স বসানো হয় না। বরং মণির উপর জমে থাকা সাদা স্তর সরিয়ে দিয়ে আলো চলাচলের পথ পরিষ্কার করা হয়। এরপর মোটা চশমা পরিয়ে (আফেকিক গ্লাস) শিশুর দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। ৫ বছর বয়স পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তারপর চোখে কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়।
অভিভাবকদের করণীয়
১. শিশু চোখে না দেখার কোনও লক্ষণ জানালে অবহেলা নয়, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
২. ছানির অস্ত্রোপচারের পর ছয় মাস অন্তর চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি।
৩. মোবাইল-টিভি কম দেখানো, কম আলোয় পড়া বন্ধ রাখা দরকার।
৪. চোখে জল পড়া, ব্যথা বা ঝাপসা দেখার কোনও উপসর্গ থাকলে অবিলম্বে চক্ষু চিকিৎসকের কাছে যান।
শিশুর চোখের যত্নে প্রয়োজন সময়মতো সচেতনতা। মনে রাখুন, চোখ শুধু দৃষ্টি নয়, জীবনের জানালাও বটে।
🚨 “ধৈর্যের সীমা ছাড়াচ্ছে!”: কর্মীদের হুঁশিয়ারি Nothing-র CEO কার্ল পে-র

