Monday, December 1, 2025

বিপন্ন ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম! পুরুষের ভবিষ্যৎ কি তবে বিবর্তনের ছাঁকনিতে?

Share

বিপন্ন ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম!

ওয়াই’ ক্রোমোজোম পুরুষ শরীর গঠনের মূলে রয়েছে— এ তথ্য অজানা নয়। মায়ের এক্স এবং পিতার ওয়াই ক্রোমোজোম মিলেই গঠিত হয় একটি পুত্র ভ্রূণ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, সময়ের সাথে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ওয়াই ক্রোমোজোম। কোটি কোটি বছরের বিবর্তনে এর গঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে কি পুরুষ লিঙ্গই বিলুপ্তির পথে?

হারাতে বসেছে পুরুষত্বের ধারক?

গবেষণা বলছে, ওয়াই ক্রোমোজোমে একসময় ১৪০০-র বেশি জিন থাকলেও এখন তা এসে ঠেকেছে মাত্র ৫৫-এ। জাপানের এক প্রজাতির ইঁদুরে দেখা গেছে, ওয়াই ক্রোমোজোম না থাকলেও পুরুষ ইঁদুর দিব্যি প্রজননে সক্ষম। ফলে প্রশ্ন উঠছে— ভবিষ্যতে কি মানুষের ক্ষেত্রেও এই ক্রোমোজোম ছাড়াই চলবে প্রজনন প্রক্রিয়া?

এই আশঙ্কার উত্তর দিচ্ছে ‘এসওএক্স৯’ নামে এক বিকল্প জিন, যা পুরুষ শরীর তৈরিতে ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। এটি পুরুষদের তিন নম্বর ক্রোমোজোমে অবস্থিত এবং ভবিষ্যতে ওয়াই ক্রোমোজোমের গুরুত্বপূর্ণ ‘এসআরওয়াই’ জিনের ভূমিকা নিতে পারে।

বিবর্তনের পথে বিকল্প খোঁজ

যদিও পুরুষদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে— এমনটা ভাবার আগে মনে রাখা জরুরি, ডিএনএ সব সময় নিজেকে রক্ষা ও বিবর্তনের মাধ্যমে অভিযোজিত করার চেষ্টা করে। ক্রোমোজোমের ক্ষয় নতুন কিছু নয়, তবে বিজ্ঞানীরা দেখছেন— ‘ডি নোভো মিউটেশন’ অর্থাৎ নতুন জিনগত পরিবর্তনের পথেও সুরাহা মিলছে। অর্থাৎ, পুরুষ লিঙ্গের বিলুপ্তি নয়, বরং নতুন পথ ধরে টিকে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম ক্ষয়ে কী কী ঝুঁকি?

চিকিৎসকদের মতে, ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোমের অবক্ষয় পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। দেখা যাচ্ছে, ‘ওয়াই ক্রোমোজোম মাইক্রোডিলিশন’-এর কারণে অনেক পুরুষ বন্ধ্যত্বে ভুগছেন। শুক্রাণুর সংখ্যা, গুণগত মান হ্রাস পাচ্ছে, যার নেপথ্যে রয়েছে জিনগত ত্রুটি, পরিবেশগত দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।

এ ছাড়াও, ‘জেনেটিক মিউটেশন’-এর কারণে ডাউন সিনড্রোম, ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের মতো অসুখও বাড়ছে। যেখানে এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজোমের সংখ্যা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

আশঙ্কা না আশাবাদ?

কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিকস’-এর অধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদার কিন্তু অতটা ভয় দেখাচ্ছেন না। তাঁর মতে, ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোমের অবক্ষয় নির্দিষ্ট কিছু রোগের ক্ষেত্রে দেখা গেলেও, তার চূড়ান্ত বিলুপ্তি বিজ্ঞানসম্মত নয়। তিনি মনে করেন, এটি একটি আশঙ্কামূলক অনুমান, যার জন্য প্রয়োজন আরও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন— পরিবর্তন অনিবার্য। কিন্তু মানবজিন তার রক্ষাকবচ নিজেই বানিয়ে নেয়। হয়তো ভবিষ্যতের পুরুষ নতুন গঠনে, নতুন ক্রোমোজোমে আত্মপ্রকাশ করবে। তবে ‘ওয়াই’ হারালেও পুরুষদের অস্তিত্ব হারাবে না— এই বিশ্বাসেই বিজ্ঞান ও সমাজ আশায় বুক বাঁধছে।

ইংল্যান্ড সফরের আগে শুভমনকে সৌরভের দুটি জরুরি পরামর্শ

Read more

Local News