ভারতীয় ফুটবলের পতন!
ভারতীয় ফুটবলের অবস্থা বর্তমানে হতাশাজনক। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দেশটি এখন ১২৭তম স্থানে। অথচ সাত বছর আগে ভারতের আশেপাশেই ছিল উজবেকিস্তান, জর্ডনের মতো দেশগুলি। আজ তারা বিশ্বকাপে খেলছে, আর ভারত যেন পেছনের দিকে হাঁটছে। প্রশ্ন উঠছে—এতটা পিছিয়ে পড়ার কারণ কী? সমাধান আদৌ আছে কি?
বাংলার ঘরোয়া ফুটবলে কিছুটা সাফল্য এলেও জাতীয় স্তরে উত্তরণ নেই। আইএসএল-এর ঝাঁ-চকচকে অবকাঠামোর মধ্যেও জাতীয় দলে আশার আলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকে সুনীল ছেত্রীর মতো প্রবীণ খেলোয়াড়কে অবসরের পরও ফিরতে হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন মুখ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিভা তুলে আনার কোনও সুসংহত ব্যবস্থা নেই।
ভারতের মূল সমস্যা শুরু তৃণমূল স্তরেই। নেই পর্যাপ্ত কোচ, নেই মানসম্মত একাডেমি। কিছু ক্লাব যেমন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, ওড়িশা কিছু উদ্যোগ নিলেও তা পুরো দেশের জন্য যথেষ্ট নয়। কোচিং-এর দিকেও ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। দেশে বিদেশি কোচের উপর ভরসা বাড়লেও, নিজেদের দেশীয় কোচদের উন্নতির কোনও পরিকল্পনা নেই।
আইএসএল-এর ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল ফুটবলের কাঠামোগত উন্নয়নের পথে বড় বাধা। এখানে প্রোমোশন-রেলিগেশন নেই, ফলে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোকে জায়গা পেতে হয় অর্থের বিনিময়ে। এতে প্রতিযোগিতার মান নেমে আসে এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে জেতার মানসিকতা গড়ে ওঠে না।
একটি বড় সমস্যা—বিদেশে খেলতে যাওয়ার অনীহা। ভারতে ঘরোয়া লিগে এত টাকা ঢালা হচ্ছে যে, তরুণ ফুটবলাররা আর ইউরোপ বা দক্ষিন আমেরিকার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে খেলতে যেতে চায় না। অথচ জাপান, ইরান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলি নিয়মিতভাবে নিজেদের খেলোয়াড়দের বিদেশে পাঠায় উন্নতির জন্য।
শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতাতেও ঘাটতি স্পষ্ট। তরুণ বয়সে কোচিং শুরু না হওয়ায়, আন্তর্জাতিক মানের শক্তি, স্ট্যামিনা তৈরি হয় না। আবার চাপের মুখে মানসিক দিক থেকেও তারা ভেঙে পড়ে। পারফরম্যান্স কোচ বা স্পোর্টস সাইকোলজিস্টের অভাব আজকের আধুনিক ফুটবলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অপেশাদার ফুটবল প্রশাসন। ফেডারেশন রাজনীতির খেলায় জড়িয়ে পড়েছে। একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করেও বাস্তবায়ন হয়নি। সিনিয়র বা জুনিয়র—দুটো স্তরেই পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট।
সার্বিকভাবে, ফুটবল যে কেবল প্রতিভার উপর নির্ভর করে না, বরং পরিকাঠামো, পুষ্টি, পরিকল্পনা, ও মনোভাব—সব মিলিয়েই সাফল্য আসে, সেটা ভারতীয় ফুটবল বুঝতেই পারছে না। উন্নতি করতে চাইলে শুধু “আশা” নয়, প্রয়োজন একজোট প্রয়াস এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি।
পশ্চিমবঙ্গের পহেলগাঁও: পুরুলিয়ার টুরগা উপত্যকার সবুজ মোহে মুগ্ধ দেশ, আপনি যাবেন কবে?

