কোহলির নাম জড়াল পদপিষ্ট মৃত্যুর ঘটনায়, আরসিবি কর্তা গ্রেফতার!
১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আইপিএল ট্রফি ঘরে তুলেছিল বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। সেই বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বেঙ্গালুরু শহরে। ৪ জুন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে আয়োজিত হয়েছিল এক জাঁকজমকপূর্ণ বিজয়োৎসব। কিন্তু সেই উল্লাস মুহূর্তেই পরিণত হয় ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে। কোহলি ও তারকাদের এক ঝলক দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে স্টেডিয়ামের বাইরে। সেই ভিড়েই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের, আহত হন অন্তত ৫০ জন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা কর্নাটকে।
এই ঘটনার জেরে শুরু হয়েছে আইনি লড়াই ও প্রশাসনিক তৎপরতা। বেঙ্গালুরু পুলিশ ইতিমধ্যেই আরসিবি এবং কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ)-এর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করেছে। একই সঙ্গে কর্নাটক হাই কোর্টেও মামলা চলছে। পরিস্থিতি ঘোরালো মোড় নেয় যখন শুক্রবার সকালে আরসিবির বিপণন বিভাগের প্রধান নিখিল সোসালেকে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া, বিজয়োৎসবের দায়িত্বে থাকা ইভেন্ট সংস্থা ‘ডিএনএ এন্টারটেনমেন্ট’-এর তিন কর্তা কিরণ, সুমন্ত ও সুনীল ম্যাথিউকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঘটনায় নাম জড়াল বিরাট কোহলিরও। কর্নাটকের শিবমোগ্গার সমাজকর্মী এইচএম ভেঙ্কটেশন কোহলির বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর কুব্বন পার্ক থানায় এফআইআর দায়েরের আবেদন জানিয়েছেন। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই যে এফআইআর দায়ের হয়েছে তার তদন্তেই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে, নতুন করে এফআইআরে কোহলির নাম যোগ হয়নি।
ঘটনার তদন্তে সিআইডি-র অধীনে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের কথা ঘোষণা করেছে কর্নাটক সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার দফতর গোয়েন্দাপ্রধান হেমন্ত নিম্বলকরকে বদলি ও রাজনৈতিক সচিব কে গোবিন্দরাজকে বরখাস্ত করেছে। এই পদক্ষেপগুলিকে কেন্দ্র করে সরকার চাপে রয়েছে। কারণ কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা দাবি করেছে, এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। তারা জানিয়েছে, পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল সরকারের, এবং সরকারের অনুমতি পেয়েই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল।
এ দিকে, নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ১৪ বছরের দিব্যাংশী কোহলির বড় ভক্ত ছিল। তার ইচ্ছেতে মা স্কুলের ছুটি দিয়ে স্টেডিয়ামের সামনে নিয়ে গিয়েছিলেন মেয়েকে। ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় দিব্যাংশী। আরও এক মৃত কামাক্ষী দেবী, যিনি কয়েক ঘণ্টার ছুটি নিয়ে গিয়েছিলেন অনুষ্ঠান দেখতে—ফিরে আসার আর সুযোগ হয়নি। বুধবারের সেই সন্ধ্যা কেড়ে নিয়েছে ১১টি প্রাণ, ছিন্নভিন্ন করেছে অনেক পরিবার।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতা আজ প্রশ্নের মুখে। এক বছর আগেই চেন্নাই সমর্থকদের একটি গ্রুপ নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল। সেই সতর্কতা গুরুত্ব পেলে হয়তো আজকের এই মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু সেটাই হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে দায়বদ্ধতা, পরিকল্পনার অভাব এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে।
এই ঘটনাটি শুধু আরসিবি বা কোহলির নামকেই বিপাকে ফেলছে না, বরং গোটা প্রশাসন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরই বড়সড় আস্থা সঙ্কট তৈরি করছে। এখন দেখার, তদন্তে কী উঠে আসে, এবং সেই অনুযায়ী কতটা ন্যায় বিচার পায় মৃতদের পরিবার।
মুম্বইয়ের বৃষ্টিতে ভিজে দীপিকার প্রথম প্রেম: মুজ্জামিল ইব্রাহিমের উজাড় স্মৃতির কথা

