পার্ক স্ট্রিটের হোটেলে কেন্দ্রীয় কর্তা ‘ডিজিটাল বন্দি’!
খাস কলকাতার বুকে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার কাহিনি, যার শিকার কেন্দ্রীয় সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। ‘সিবিআই থেকে বলছি’—এই পরিচয়ে প্রতারক চক্র তাঁকে ফোন করে এমন এক ভয় ধরায়, যার পরিণতি গিয়ে ঠেকে পার্ক স্ট্রিটের একটি বিলাসবহুল হোটেলে। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে আটকে রেখে কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হয় ২৫ লক্ষ টাকা। ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে মোট আট জন, যাঁদের বেশিরভাগই রাজস্থানের বাসিন্দা।
এই প্রতারণার শুরু ২২ মে। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডসের ডেপুটি ডিরেক্টর শৌভিক শিকদারের মোবাইলে ফোন আসে অজ্ঞাত নম্বর থেকে। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা কয়েক জন নিজেদের পরিচয় দেয় সিবিআই অফিসার হিসেবে। তারা জানায়, শৌভিকের নামে একটি পার্সেল ধরা পড়েছে, যাতে মাদক রয়েছে। সেই কারণে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই করা দরকার। এমন ভয়ংকর অভিযোগ শুনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন শৌভিক।
এরপরই শুরু হয় ‘ডিজিটাল বন্দিত্ব’। তাঁকে ডাকা হয় পার্ক স্ট্রিটের এক হোটেলে, যেখানে ‘তদন্তের’ অজুহাতে তাঁকে আটকে রাখে অভিযুক্তেরা। তখনই কৌশলে তাঁকে অনলাইনে একাধিক দফায় ২৫ লক্ষ টাকা পাঠাতে বাধ্য করা হয়। প্রতারকেরা আশ্বাস দিয়েছিল, সিবিআই যাচাইয়ের পরে সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছিল নিছক ধোঁকা।
২৩ মে, তেঁতুলতলার বাসিন্দা শৌভিক পর্ণশ্রী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অবশেষে ৫ জুন রাতে নিউ টাউনের ইকো পার্ক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়—নরপত সিংহ, রাজেন্দ্র সোনি এবং হরিশ কুমার। তাদের জেরা করে পুলিশ হাওড়ার গোলাবাড়ি এলাকা থেকে আরও পাঁচ জনকে ধরে ফেলে—মনোহর, সংগ্রাম সিংহ, সুরজ, দিলীপ এবং জিতেন্দ্র। সকলেই রাজস্থানের জোধপুরের বাসিন্দা।
তদন্তে উঠে এসেছে, শহরে এসে অভিযুক্তেরা প্রথমে নিউ টাউনের একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠে। এরপর তারা নিয়মিত ঠিকানা বদলাতে থাকে, যাতে নজরে না পড়ে। দল ভাগ করে একদল হাওড়াতেও প্রতারণা শুরু করে। পুলিশ দুই জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পেয়েছে দুটি পিওএস মেশিন, পাঁচটি স্মার্টফোন, ব্যাঙ্কের একাধিক চেকবই, পাসবই, আধার, প্যান ও ভোটার কার্ডের ফটোকপি। সব মিলিয়ে স্পষ্ট—এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রতারক চক্র।
৮ জন ধৃতকে শুক্রবার আলিপুর আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ১৮ জুন পর্যন্ত তাদের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে। কী ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক পর্যন্ত এই চক্রের জালে জড়িয়ে গেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এই প্রতারণার ঘটনায় যেমন প্রমাণ মিলেছে ডিজিটাল নিরাপত্তার দুর্বলতার, তেমনই উঠে এসেছে প্রশাসনিক সচেতনতাহীনতার ছবিও। পুলিশি তদন্তে এখন নজর, আদৌ ধৃতদের বাইরে আরও কেউ এই চক্রের মাথা কি না। আগামী দিনে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতে পারে বলে মনে করছে তদন্তকারী দল।
এমন ঘটনা এক দিকে যেমন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তেমনই শহরের বাসিন্দাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিচ্ছে। পুলিশের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল—কোনও সরকারি সংস্থা ফোনে বা হোটেলে ডেকে আর্থিক লেনদেন করতে বাধ্য করে না। এখন সেই সতর্কতা না মানার ফল ভুগতে হল এক সরকারি আধিকারিককে।
মুম্বইয়ের বৃষ্টিতে ভিজে দীপিকার প্রথম প্রেম: মুজ্জামিল ইব্রাহিমের উজাড় স্মৃতির কথা

