ইডেনে ক্রিকেটে অশান্তি!
বাংলার ক্রিকেটের আকাশে বিতর্কের মেঘ ক্রমেই ঘনাচ্ছে। ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত প্রথম ডিভিশন লিগের ফাইনালের পঞ্চম ও শেষ দিনে এমন এক ঘটনা ঘটল, যা বাংলার ক্রিকেটের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। ইস্টবেঙ্গল ও ভবানীপুরের কর্তারা মাঠে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় পুলিশ পর্যন্ত ডাকা হয়।
ম্যাচ চলাকালীন ভবানীপুর ৬ উইকেটে ৬৪৩ রান তুলেছিল। ইস্টবেঙ্গল তখন ৮ উইকেটে ২৪৩ রান করছিল। হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয় এবং ম্যাচ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ভবানীপুর শিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, বৃষ্টি মাত্র সামান্য শুরু হতেই খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা অনুচিত। তাঁদের মতে, আরও কিছুক্ষণ খেলা চালিয়ে ম্যাচের ফল নিশ্চিত করা যেত।
অবস্থার এই মোড়েই জ্বলে ওঠে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা। ভবানীপুরের কাছে তখন মাত্র ২ উইকেট দরকার ছিল লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। তাই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র হয়। ম্যাচ বন্ধ হওয়ার ঠিক পরেই শুরু হয় উত্তেজনা।
ইস্টবেঙ্গলের অপরাজিত ব্যাটসম্যান ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ও কণিষ্ক শেঠ মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন ভবানীপুরের ক্রিকেটার শাকিরের সঙ্গে তাঁদের বাক্যালাপ থেকে বিবাদ শুরু হয়। বাক্যালাপ থেকে বাকযুদ্ধ, আর তারপর হাতাহাতিতে রূপ নেয় পরিস্থিতি। দুই দলের কর্মকর্তারা পরস্পরের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। বিষয়টি দেখে দর্শক ও অন্যান্য ক্রিকেটাররাও হতবাক।
এই অশান্তি ঠেকাতে সিএবি’র কর্তারা মাঠে নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নীতীশ রঞ্জন দত্ত, ট্যুর ও ফিক্সচার কমিটির প্রধান সঞ্জয় দাস, মেডিক্যাল কমিটির প্রধান প্রদীপ দাস সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা মধ্যস্থতা করেন। কিন্তু দুই শিবিরের উত্তেজনা এতটাই বেশি ছিল যে তাদের বোঝানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এই ঘটনায় বাংলার ক্রিকেটের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বাংলার মাঠে ক্রিকেটকে মাদকমুক্ত ও সুস্থ পরিবেশে টিকিয়ে রাখার জন্য নানা প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু এই বিতর্কমূলক পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে সেই সাফল্যের পথ কঠিন করে তুলেছে।
এই প্রথম নয় যে, ক্রিকেট মাঠে উত্তেজনা ও বিবাদ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচে এমন অশান্তির ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর বার্তা। ক্রিকেট শুধুমাত্র প্রতিযোগিতা নয়, এটি খেলোয়াড়দের, কোচদের, কর্মকর্তাদের ও দর্শকদের মধ্যে বন্ধুত্ব, সম্মান এবং শৃঙ্খলার সম্পর্কেরও একটি পরীক্ষা। সে দিক থেকে এই ঘটনার জন্য সবাই ভাবতে বাধ্য।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই অশান্তির পর আগামী ক্রিকেট মরশুমে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে? ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন যত দ্রুত সম্ভব, যেন বাংলার ক্রিকেট আবার সুস্থ এবং সম্মানজনক পথে ফিরে আসতে পারে।
বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এই ঘটনা বড় ধাক্কা হলেও আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না এবং মাঠে খেলাধুলার আসল মর্যাদা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

