Monday, December 1, 2025

রুশ ঘাঁটিতে ধ্বংসযজ্ঞের নেপথ্যে পুরনো চুক্তি? ইউক্রেনের ‘মাকড়সার জাল’ অভিযানে হোঁচট খেয়েছে পুতিনের যুদ্ধবিমান বহর

Share

ইউক্রেনের ‘মাকড়সার জাল’ অভিযানে হোঁচট খেয়েছে পুতিনের যুদ্ধবিমান বহর!

ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ড্রোন হামলা রাশিয়ার সামরিক পরিকাঠামোর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। একযোগে পাঁচটি রুশ বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনে ৪১টি বোমারু যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে কিভের বাহিনী। গোটা দুনিয়ার নজর এখন মস্কোর সেই ভুলের দিকে, যা সম্ভবত পুরনো এক আন্তর্জাতিক চুক্তির দায়েই রাশিয়াকে মাশুল গুনতে বাধ্য করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০১০ সালে ওবামা-মেদভেদেভ যুগে স্বাক্ষরিত ‘স্টার্ট’ (Strategic Arms Reduction Treaty) নামক অস্ত্র হ্রাস চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাশিয়াকে কিছু বোমারু বিমান খোলা জায়গায় রাখতে হয়েছিল। সেই নিয়মকেই ব্যবহার করেছে ইউক্রেন, আর তার ফলেই এই ‘ঐতিহাসিক’ আঘাত সম্ভব হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ‘খোলা আকাশের নীচে’ রাখা বিমানগুলিই মূল লক্ষ্য ছিল কিভের। উপগ্রহচিত্র এবং সামরিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২ নামক বোমারু বিমানগুলি সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেনীয় ড্রোন। এই ঘটনার পরেই আবার আলোচনায় ফিরে এসেছে ‘স্টার্ট’ চুক্তি, যার উৎস ১৯৯১ সালের সোভিয়েত-আমেরিকা সম্পর্কের শেষ পর্বে। যদিও ২০২৩ সালে রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে আসে, তবু ৩০ বছরের অভ্যাসে বিমানগুলি নিরাপত্তাহীনভাবে ফেলে রেখেছিল মস্কো।

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যটি সামনে এনেছে ইউক্রেনের গোপনচর সংস্থা এসবিইউ। তাদের দাবি, এই গোটা হামলার ছক কষেছিল গুপ্তচর আর্টেম টিমোফিয়েভ নামে এক এজেন্ট, যাঁকে কয়েক বছর আগেই ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। তিনি ছদ্মবেশে একজন উদ্যোগপতির জীবন কাটাচ্ছিলেন, আর এআই-চালিত ড্রোন নিয়ে ট্রাকচালকদের সাহায্যে হামলার রসদ পৌঁছে দিচ্ছিলেন বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে। এই অভিযানের নাম ছিল ‘মাকড়সার জাল’। জানা গেছে, বেলায়া, ওলেনিয়া, ইভানোভো এবং দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটির ওপর পরিচালিত হয় এই আক্রমণ, যার পরিধি ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

‘ক্যাপেলা স্পেস’ কৃত্রিম উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার এ-৫০ এডব্লিউএসিএস নামের উন্নত রাডার বিমানেরও অবস্থা শোচনীয়, যা রাশিয়ার পক্ষে বড় ধাক্কা। জানা যাচ্ছে, মাত্র ১১৭টি সস্তা এফপিভি ড্রোন ব্যবহার করেই কিভ এই আক্রমণ চালিয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৭০০ কোটি ডলার। যদিও মস্কো এই ক্ষয়ক্ষতি মানতে নারাজ, প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

তবে এত বড় সাফল্যের পরও ইউক্রেন নিশ্চিন্ত নয়। কারণ, পুতিন এখন আর্টেম টিমোফিয়েভকে খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছেন। দু’জন ট্রাকচালক ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছেন। মনে করা হচ্ছে, ক্রেমলিন হয়তো এবার সরাসরি ঘাতকদল পাঠাবে তাঁকে খতম করতে।

এই হামলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে নতুন এক বাঁকে নিয়ে গেছে। ইউরোপের ওপর ছায়া ফেলছে সম্ভাব্য বড়সড় সংঘর্ষের আতঙ্ক। জ়েলেনস্কির সাহসী অভিযান যেমন প্রশংসিত হচ্ছে, তেমনই পুতিনের প্রতিক্রিয়া নিয়েও জেগেছে বিশ্বজোড়া উৎকণ্ঠা।

বর্ষার আগেই বাইরে রাখা আসবাব ভালো রাখার ৫ সহজ উপায়

Read more

Local News