ভবিষ্যতের শিশুর জন্য বিপদের ইঙ্গিত?
এক সময় ছিল, যখন সন্ধে নামলেই ঘরের কোণে বসে দাদু-ঠাকুরমা বা মা-বাবা শিশুকে গল্প শোনাতেন। রাক্ষস, বাঘ, রাজপুত্র কিংবা পরী— এই গল্পগুলো শুধু বিনোদনই নয়, শিশুমনের বিকাশেও রাখত গভীর প্রভাব। কিন্তু নতুন প্রজন্মের অভিভাবকদের মধ্যে এই চর্চা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা সেই দুঃসংবাদই জানাল।
গল্প শোনার হার কমছে, বাড়ছে সমস্যা
ব্রিটেনে ৫ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আধুনিক বাবা-মায়ের অর্ধেকেরও কম সংখ্যক মানুষ সন্তানকে গল্প শোনাতে ভালোবাসেন। নানা ব্যস্ততা, ডিজিটাল বিনোদনের প্রতি আসক্তি ও পাঠাভ্যাসের অভাব— এই প্রবণতার মূল কারণ। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে এক জন নাকি জীবনে কখনও মা-বাবার মুখে গল্প শোনেনি!
এই অভ্যাস কমে যাওয়ার ফলে শিশুদের মধ্যে একাধিক মানসিক ও ভাষাগত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ জানান, এখনকার শিশুদের মধ্যে কমিউনিকেশন স্কিল এবং কগনিটিভ স্কিল-এর ঘাটতি ক্রমশ চোখে পড়ছে। নির্দেশ শুনে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, প্রশ্ন করার সাহস, এবং পরিস্থিতি বুঝে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
শ্রুতি ও সংলাপের গুরুত্ব
শুধু বই পড়া নয়, কারও মুখে গল্প শোনা শিশুর মনে প্রশ্ন তৈরি করে। সেখান থেকে জন্ম নেয় কল্পনা, কথোপকথন ও বিশ্লেষণ। এটি একমুখী নয়, বরং দ্বিমুখী ভাবনার সূচনা করে। যেমন, গল্পে শোনা “জঙ্গলে বাঘ হাঁটছে” শুনে শিশুর মনে প্রশ্ন জাগে— “বাঘটিকে দেখতে কেমন?” এই প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে তৈরি হয় বুদ্ধি ও ভাষার বিকাশ।
মনোবিদদের মতে, এই প্রশ্নগুলোই শিশুর শেখার জগৎকে প্রসারিত করে। কিন্তু একা একা মোবাইলে বই পড়লে এই যোগাযোগ তৈরি হয় না, কল্পনাশক্তি বিস্তার পায় না।
মোবাইলের বদলে মানুষের সংস্পর্শ প্রয়োজন
শিশুর সঙ্গে মা-বাবার মুখোমুখি আলাপচারিতা শুধু শেখার পথ নয়, এটি তার নিরাপত্তাবোধ এবং আবেগীয় উন্নতিরও ভিত্তি। পায়েলের মতে, “একসঙ্গে বসে গল্প শোনার আনন্দ বা নিরাপত্তা কোনও স্ক্রিন দিতে পারে না।” আগে পরিবারে ঠাকুমা-দিদা গল্প বলতেন, কিন্তু নিউক্লিয়ার পরিবারে সেই শূন্যতা মা-বাবাকেই পূরণ করতে হবে।
সমাধানের কিছু সহজ উপায়
পায়েলের পরামর্শ অনুযায়ী—
১. স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন, এবং দেখার সময় পাশে বসুন।
২. প্রতিদিন সময় নির্ধারণ করুন শিশুদের সঙ্গে গল্প বা কথোপকথনের জন্য।
৩. একাধিক নির্দেশ দিন, যেমন দূর থেকে খাতা এনে চিত্র আঁকতে বলা।
৪. কল্পনাশক্তি জাগাতে প্রশ্ন করুন, যেমন— “যদি তুমি রাজা হতে, কী করতে?”
গল্প শোনানো শুধু একটুকরো অভ্যাস নয়, এটি শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। নতুন প্রজন্মকে সুস্থ, বুদ্ধিদীপ্ত ও কল্পনাশীল করে তুলতে আমাদের আবার ফিরতে হবে সেই পুরনো গল্পের জগতে।
পাতিলেবু খেলে মাইগ্রেন কমে? ডাক্তাররা যা বলছেন ভাইরাল টোটকা নিয়ে

