কাউন্সেলিং কি শুধুই লোকদেখানো?
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামোতে ধাক্কা দিয়ে উঠল নতুন বিতর্ক— জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘পোস্টিং’ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন আরজি কর আন্দোলনের তিন মুখ: অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার এবং আসফাকুল্লা নাইয়া। তাঁদের দাবি, কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় নিয়ম মেনেও তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী পোস্টিং দেওয়া হয়নি। বরং পরিকল্পিতভাবে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের— এবং এর পেছনে রয়েছে স্পষ্ট ‘প্রতিহিংসা’।
নিয়ম মেনে কাউন্সেলিং, তবু প্রত্যাখ্যাত পছন্দ!
চিকিৎসক অনিকেতরা জানিয়েছেন, পোস্টগ্র্যাজুয়েট শেষ হওয়ার পর তিন বছরের ‘বন্ড’-এর নিয়ম মেনে তাঁদের রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়োগ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগের আগে প্রকাশিত হয় শূন্যপদের তালিকা, এবং মেধা অনুযায়ী কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে পোস্টিং চূড়ান্ত হয়।
কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। মেধার ভিত্তিতে হাওড়া, আরজি কর বা আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার কথা থাকলেও, দেবাশিসকে পাঠানো হয় মালদহের গাজোল হাসপাতালে, অনিকেতকে পুরুলিয়ায় এবং আসফাকুল্লাকে রায়গঞ্জে।
অনিকেত প্রশ্ন তোলেন, “কাউন্সেলিংয়ে তো হাওড়ার নাম ছিল, তাহলে পোস্টিং গাজোলে কেন?” দেবাশিসও জানিয়ে দিয়েছেন, আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। অন্যদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে এই পোস্টিংয়ের প্রতিবাদে সরব হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম।
‘গোপন নির্দেশ’ না কি প্রতিহিংসা?
চিকিৎসকদের অভিযোগ, কাউন্সেলিংয়ের নিয়ম মেনে মেধা অনুযায়ী পছন্দের হাসপাতালে যাওয়ার কথা থাকলেও, তাঁদের তিন জনের ক্ষেত্রেই আচমকা অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অনিকেত বলেন, “বিশেষ সচিব জানিয়েছেন, গোপন কনফিডেন্সিয়াল নির্দেশের ভিত্তিতে বদলি হয়েছে। আমরা জানতে চেয়েছি, সেই নির্দেশ কিসের ভিত্তিতে? এর উত্তর মেলেনি।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্যসচিব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন— ‘আমরা সরকারের অংশ, যা মনে করি তাই করব।’ এই অবস্থায় স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ।”
আন্দোলনের পথে, পাশে থাকবে নাগরিক সমাজ
তাঁদের বক্তব্য, এটি কোনও রুটিন বদলি নয়, বরং আন্দোলনের মূল তিন মুখকে পরিকল্পনা করে পছন্দের স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং এই ঘটনার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এভাবে কাউন্সেলিংয়ের প্রক্রিয়া অবমাননা করলে চিকিৎসকদের আস্থার জায়গায় বড়সড় ধাক্কা লাগবে। অনিকেতরা জানাচ্ছেন, নাগরিক সমাজকে পাশে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
একই সঙ্গে বুধবার আইনি পথে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়েও পরামর্শ করা হবে বলে জানান।
প্রশ্ন রইল— কাউন্সেলিং কি তাহলে কেবলই নামমাত্র নিয়ম?
যদি মেধা, পছন্দ ও প্রক্রিয়ার পরেও ডাক্তারদের একতরফাভাবে অন্যত্র পাঠানো হয়, তাহলে সেই কাউন্সেলিং-এর মানে কী? স্বাস্থ্য ভবনের গোপন সিদ্ধান্তে যদি এমন ‘পোস্টিং পরিবর্তন’ই শেষ কথা হয়, তাহলে কি এটাই স্বচ্ছতার প্রতীক?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। তবে একটুকু স্পষ্ট— আরজি কর আন্দোলনের ডাক্তারদের রুখতে যে রণনীতি নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নৈতিকতা নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠে গেল।
কবিতা না কি যুদ্ধ? নুসরতের রহস্যঘেরা পোস্টে কি সম্পর্ক পুনর্মিলনের ইঙ্গিত?

