‘বার্লিনের দেওয়াল’ ভাঙল ব্রাজিল!
ব্রাজিল ফুটবলে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সাক্ষী হল বিশ্ব। ষাট বছর পর, দেশটি প্রথমবার এক বিদেশিকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে বেছে নিল—ইতালির কিংবদন্তি কার্লো আনচেলোত্তি। এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি কোচ নিয়োগ নয়, এটি যেন ‘বার্লিন ওয়াল’ ভেঙে বেরিয়ে আসা—নিজস্ব গণ্ডি ভেঙে নতুন পথে হাঁটার দুঃসাহস।
১৯৬৫ সালের পর ব্রাজিলের জাতীয় দলে কোনও বিদেশি কোচ ছিল না। তাই আনচেলোত্তির নিয়োগ মানেই ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। প্রশ্ন উঠছে, “তিনি কি পারবেন ব্রাজিলীয় সাম্বার জাদু ফিরিয়ে আনতে?”
‘ডন কার্লো’ নামে খ্যাত আনচেলোত্তি ফুটবল বিশ্বের পরিচিত মুখ। তাঁর সিগার আর ওয়াইনের চুমুকে বিলাসিতার ছবি যতটা চেনা, ততটাই চেনা তাঁর ভ্রূকুঞ্চিত দৃষ্টি—যা প্রান্তরেখার ধারে দাঁড়িয়ে বদলে দেয় ম্যাচের মোড়। বয়স ৬৫ হলেও আজও তিনি যুদ্ধের ময়দানে নামার জন্য প্রস্তুত। আর এই যুদ্ধে তাঁর লক্ষ্য, ব্রাজিলকে সেই সোনালি যুগে ফেরানো যেখানে পেলে, গারিঞ্চা, রোনাল্ডোরা এক সময় শাসন করতেন।
শেষ কয়েক দশকে ব্রাজিল যতটা না জয় পেয়েছে, তার চেয়েও বেশি হতাশা দিয়েছে। ২০০২ সালের পর আর কোনও বিশ্বকাপ নেই তাদের ঘরে। ২০১৪ সালের সেই বিভীষিকাময় ১-৭ হারের স্মৃতি আজও দুঃস্বপ্ন হয়ে রয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে আনচেলোত্তিকে কোচ হিসেবে আনা নিঃসন্দেহে সাহসী সিদ্ধান্ত। অভিজ্ঞ ভারতীয় কোচ কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, “জাতীয় দলে কখনও কোচিং করেননি বটে, তবে তাঁর অভিজ্ঞতার ভারই তাঁর বড় শক্তি। ব্রাজিলের ছেলেরা যেন ফান ও ফ্রিডম ভালোবাসে। এই দলে একজন ইউরোপীয় কোচ দরকার ছিল।”
কেন আনচেলোত্তি?
১. দল পরিচালনায় দক্ষতা: ক্লাব ফুটবলে তাঁর প্রমাণিত সাফল্য, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, চেলসি, পিএসজি—যেখানেই গেছেন, নিয়ে এসেছেন ট্রফি।
- তারকাদের সামলানোর ক্ষমতা: রোনাল্ডো থেকে এমবাপে—সবাই তাঁর অধীনে খেলেছেন। অথচ সাজঘরে কখনও শৃঙ্খলা ভেঙেছে, এমন নজির নেই।
৩. ব্রাজিলীয়দের সঙ্গে খাতির: ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো, কাসেমিরোদের সাথে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে রিয়ালে কোচিং করার সময়। ফলে তাদের সেরাটা বের করে আনার জন্য বাড়তি কৌশলের প্রয়োজন পড়বে না।
৪. কৌশলগত নমনীয়তা: ব্রাজিলের ফুটবল বরাবর দ্বিধায় ভুগেছে—শৈল্পিক ফুটবল না ফলপ্রসূ ফুটবল? আনচেলোত্তি এই দুইয়ের সংমিশ্রণে বিশ্বাসী, যেটা ব্রাজিলের জন্য আদর্শ হতে পারে।
৫. ‘সিরিয়াল উইনার’ মানসিকতা: ক্লাব স্তরে যেভাবে তিনি সাফল্যের চূড়ায় উঠেছেন, জাতীয় দলেও সেই সাফল্য আনার সামর্থ্য রাখেন।
যদিও সময়ই বলবে, আনচেলোত্তি ব্রাজিলকে কতটা বদলাতে পারবেন, তবে এটুকু নিশ্চিত—ব্রাজিল সাহস দেখিয়েছে। ‘বার্লিন ওয়াল’ তারা ভেঙেছে, আর নতুন দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছে।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সম্ভাবনা, আগামী সপ্তাহে দক্ষিণের ছয় জেলায় মুষলধারে বৃষ্টি

