চায়ের সঙ্গে ধূমপান?
সকালের এক কাপ গরম চা আর সঙ্গে একটা সিগারেট—এই অভ্যাস অনেকের জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ধূমপায়ীদের কাছে, চা না হলে যেন সিগারেট জমে না, আর সিগারেট ছাড়া চাও যেন পানসে! কিন্তু জানেন কি, এই নিরীহ মনে হওয়া অভ্যাসটা শরীরের ভিতরে কতটা ক্ষতিকর তাণ্ডব চালাচ্ছে?
চা যেমন জনপ্রিয় পানীয়, তেমনই ধূমপান এক মারাত্মক নেশা। আলাদা আলাদা ভাবেই ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু যখন এই দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটে, তখন তা শরীরে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে—এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক চিকিৎসা গবেষণা।
চায়ের সঙ্গে সিগারেট—দুই বিপরীত শক্তির সংঘর্ষ
‘অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিন’ নামক একটি নামী মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, গরম চায়ের সঙ্গে ধূমপানের ফলে খাদ্যনালীর কোষের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। চায়ের তাপে কোষগুলি তখন বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ঠিক এই সময় ধূমপানের ফলে শরীরে প্রবেশ করা নিকোটিন ও টক্সিন সহজেই কোষগুলিকে আক্রান্ত করে। এর ফলে খাদ্যনালীতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
চা-তে থাকা ক্যাফিন পাকস্থলীতে পৌঁছে হজমে সাহায্য করে এমন এক পাচক রস তৈরি করে। কিন্তু সিগারেটের নিকোটিন সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। যার ফলে দেখা দিতে পারে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বা মেজাজ খারাপের মতো উপসর্গ। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে হজমের সমস্যা, পাকস্থলীতে আলসার এমনকি ক্যানসারের সম্ভাবনাও থেকে যায়।
ধূমপানের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি
চিকিৎসকদের মতে, ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসার, মুখগহ্বরের ক্যানসার ও পাকস্থলীর আলসারের ঝুঁকি অনেক বেশি। একজন নিয়মিত ধূমপায়ীর গড় আয়ু ২০ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তুলনায়, যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ৭ শতাংশ কম।
এই অভ্যাস শুধু নিজের ক্ষতিই করে না, আশেপাশের মানুষদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। প্যাসিভ স্মোকিং-এর কারণে পরিবার ও সহকর্মীদেরও ক্ষতি হয়।
কী করবেন এই ক্ষতি এড়াতে?
- চায়ের সময় ধূমপান বন্ধ করুন – প্রথম ধাপেই এই দুই অভ্যাসের সংমিশ্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
- নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT) – ধীরে ধীরে ধূমপান ছাড়তে চিকিৎসকের পরামর্শে এই থেরাপি নিতে পারেন।
- চা-কে উপকারী বানান – চায়ের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর কিছু যেমন আদা, তুলসী বা দারচিনি মিশিয়ে পিন, যাতে তা শরীরের উপকারে আসে।
- মানসিক শক্তি গড়ে তুলুন – অনেক সময় ধূমপান অভ্যাস না, মানসিক নির্ভরতা হয়ে ওঠে। এতে কাউন্সেলিং কার্যকর হতে পারে।
পরিশেষে বলাই যায়, এক কাপ চা আপনার দিনটাকে চাঙ্গা করতে পারে, কিন্তু তার সঙ্গে সিগারেট? সেটা আপনার জীবনকে প্রতিনিয়ত ছিঁড়ে ফেলছে। তাই নিজেকে বাঁচান, অভ্যাস পাল্টান। চাইলে আমি ধূমপান ছাড়ার জন্য পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যকর চায়ের রেসিপি, বা একটি সচেতনতামূলক পোস্টার তৈরি করে দিতে পারি।
আপনার জিমেল আইডি কি অন্য কেউ ব্যবহার করছে? সতর্ক না হলে বিপদ ডেকে আনতে পারেন!

