মাওবাদী নেতা কেশবের মৃত্যুতে ‘গর্বিত’ প্রধানমন্ত্রী!
বছর সত্তর ছুঁইছুঁই বয়সে অস্ত্র হাতে বিদ্রোহী পথের যবনিকা নামল। ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত হলেন সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ। তাঁর মৃত্যু নিয়ে উচ্ছ্বাসে মুখর দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জানালেন গর্ব। তবে এই মৃত্যু শুধু একটি এনকাউন্টার নয়—এ যেন দীর্ঘ এক সশস্ত্র বিপ্লবের অন্তিম সুর।
১৯৫৫ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম কেশবের। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র, পরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান ওয়ারঙ্গলের ‘রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’-এ। খেলাধুলাতেও ছিলেন সমান দক্ষ, জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেন। কিন্তু কেরিয়ার নয়, কেশব বেছে নেন বিপ্লবের পথ। আশির দশকে কোড্ডাপল্লি সিতারামাইয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগ দেন জনযুদ্ধ (পিডব্লিউজি) গোষ্ঠীতে। সেখান থেকেই তাঁর যাত্রা সশস্ত্র গেরিলা আন্দোলনের দিকে।
২০০৪ সালে জনযুদ্ধ ও এমসিসি মিলিয়ে গঠিত হয় নতুন সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)। তার পর থেকেই কেশব ছিলেন সংগঠনের সামরিক শাখার মাথা। ছিলেন ‘ট্রাম’ বা টেকনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড আর্মস ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের দায়িত্বে। ২০১৮ সালে তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের পদে বসানো হয়, যদিও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০১৭-তেই। তাঁর পূর্বসূরি গণপতির থেকে কৌশলে একেবারে আলাদা ছিলেন কেশব—তিনি ছিলেন ‘তাত্ত্বিক’ নয়, মাটি ছোঁয়া এক যোদ্ধা, যিনি আগ্রাসী সমরনীতি দিয়ে সংগঠনকে নতুন চেহারা দিয়েছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কেশবের আমলে মাওবাদীদের কৌশল অনেক বেশি সামরিক ঘরানায় চলে যায়। অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং যুদ্ধদক্ষ নেতাদের সংগঠনে জায়গা দেন তিনি। গণপতির সঙ্গে মতপার্থক্যও তৈরি হয় এই বিষয়েই। ফলে ধীরে ধীরে সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে সরে যান গণপতি। তাঁর জীবিত থাকা নিয়েও এখন সন্দেহ রয়েছে।
বুধবার ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’-এ কেশবের মৃত্যু শুধু এই নেতৃত্ব বদলের পরিণতিই নয়, সিপিআই (মাওবাদী)-র এক যুগের সমাপ্তি। কেশবের সঙ্গেই প্রাণ হারান আরও ২৯ জন মাওবাদী। এই অভিযানে আনন্দিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই অসাধারণ সাফল্যে আমাদের বাহিনীর জন্য গর্ব হচ্ছে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একে তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মন্তব্য করেন।
এক সময় যার মাথার দাম ছিল ১০ লক্ষ, পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি টাকায়—সেই কেশবের মৃত্যু যেন মাওবাদী আন্দোলনেরই এক প্রতীকি ইতি। গত দুই দশকে যাঁরা মাওবাদী নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর গোপন অভিযানে। সন্দে রাজামৌলি, আজাদ, সুধাকর, কিষেণজি—তালিকায় এবার যোগ হল বাসবরাজ ওরফে কেশবের নাম।
একজন ইঞ্জিনিয়ার, এক সময়ের ক্রীড়াবিদ, আর শেষমেশ এক সশস্ত্র বিপ্লবের নেতা—নাম্বালা কেশব রাওয়ের জীবন যেন এক বহুরৈখিক কাহিনি। যার শেষ অধ্যায় রচিত হল বন্দুকের গর্জনে, জঙ্গলের বুক চিরে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে ঘোমটা ঢাকা জাহ্নবী! লাল গালিচায় মা শ্রীদেবীর ছায়া যেন ফিরল মেয়ে রূপে

