ঝাড়ু হাতে শিক্ষকরা!
চাকরি হারিয়ে বিকাশ ভবনের সামনে টানা অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া নিয়োগের বিরুদ্ধে, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছে এই নীরব অথচ দৃঢ় আন্দোলন। শনিবারের মতো রবিবারও সরকারি দফতর ছুটির কারণে বন্ধ থাকলেও, আন্দোলনের মেজাজে এতটুকু ভাটা পড়েনি। বরং প্রতিবাদের ভাষা এ বার আরও মানবিক, আরও গভীর।
রবিবার সকালে এক অভাবনীয় দৃশ্যের সাক্ষী রইল কলকাতা। আন্দোলনস্থল নোংরা হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিনের অবস্থানের ফলে — অথচ কেউ না বললেও শিক্ষক-শিক্ষিকারাই ঝাড়ু হাতে তুলে নিলেন। রাস্তা, ফুটপাত পরিষ্কার করে তাঁরা যেন বুঝিয়ে দিলেন, এই আন্দোলন শুধু অধিকার আদায়ের নয়, সম্মানের লড়াইও বটে।
এই দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে আন্দোলনের মঞ্চে যোগ দিলেন দৃষ্টিহীন এবং বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হল তাঁদের বিশেষ কর্মসূচি। কেউ কেউ বসে পড়ালেন পথচলতি শিশুদের, কেউ বললেন তাঁদের জীবনের লড়াইয়ের গল্প। ‘উদয়নের পাঠশালা’ নামে এই প্রতীকী পাঠদানে ফুটে উঠল শিক্ষার প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা।
চোখে দেখতে পান না, হাঁটতেও পারেন না ঠিকভাবে — তবু যাঁরা নিজগুণে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় প্রবেশ করেছিলেন, আজ তাঁরা রাস্তায়। কারণ, ২০১৬-র এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হয় আদালতের রায়ে। সেই তালিকায় ছিলেন ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী, যাঁদের মধ্যে অনেকেই দৃষ্টিহীন কিংবা শারীরিকভাবে বিশেষভাবে সক্ষম। আজ তাঁরাও ন্যায়ের আশায়, পথে।
‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর ব্যানারে এই আন্দোলন শুধু রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নয়, মানবিকতারও এক প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভের মাঝে ছোট ছোট শিশুরা হাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষকদের পাশে, পাশে রয়েছেন তাঁদের অভিভাবকেরাও। একদা যাঁরা স্কুলে এই শিক্ষকদের পাঠ নিয়েছিল, আজ তাঁরাই তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে — এই দৃশ্য যেন অনেক কথাই বলে দেয়।
শুধু স্লোগান নয়, রাস্তায় বসে বই খুলে শিশুদের পড়ানো, নিজের জীবনসংগ্রামের কথা ভাগ করে নেওয়া — এই প্রতিবাদের ভাষা আর পাঁচটা আন্দোলনের মতো নয়। এই প্রতিবাদ যেন শিক্ষা দেয়, সম্মান কীভাবে অর্জন করতে হয়, এবং হারিয়ে যাওয়া মর্যাদা কীভাবে ফিরে পেতে হয়।
শিক্ষক মানেই শুধু পাঠদান নয়, সমাজ গঠনের অন্যতম স্তম্ভ। আর সেই স্তম্ভ যখন ন্যায়ের জন্য লড়াইয়ে নেমে পড়ে, তখন তা আর শুধু চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি থাকে না — তা হয়ে ওঠে এক জনসমর্থনের আন্দোলন, এক নীরব বিপ্লব।
এই আন্দোলনের পথ কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা হয়তো সময় বলবে। কিন্তু আজ যে দৃশ্য শহর দেখল — শিক্ষকেরা ঝাড়ু হাতে রাস্তা সাফ করছেন, দৃষ্টিহীন শিক্ষক শিশুকে পড়াচ্ছেন — তা থেকে আমরা শিখতে পারি, সত্যিকারের শিক্ষক সব সময়ই পথ দেখান, এমনকি প্রতিবাদের পথেও।
সরস্বতী নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা কাগজেই সীমাবদ্ধ? বাস্তব কাজ এখনও অধরা

