Monday, December 1, 2025

ক্ষুধার্ত জনস্রোত, অবরুদ্ধ উপত্যকা: গাজায় দুর্ভিক্ষের মুখে ৫ লক্ষ মানুষ, চলছেই ইজ়রায়েলের হামলা

Share

গাজায় দুর্ভিক্ষের মুখে ৫ লক্ষ মানুষ, চলছেই ইজ়রায়েলের হামলা

গোলাগুলির আওয়াজে দিন শুরু, ক্ষুধা আর আতঙ্কে রাত কাটে। এমনই এক বিভীষিকাময় বাস্তবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা। চারপাশে বোমার শব্দ, মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে যুদ্ধবিমান। আর মাটির উপরে—ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না, মায়ের চোখে ভয়, আর ভেঙে পড়া মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

ইজ়রায়েলি বাহিনীর অবরোধে গত মার্চ মাস থেকেই কার্যত আটকে পড়েছে গোটা গাজা। ঢুকতে পারছে না একটিও ত্রাণবাহী ট্রাক, নেই বাণিজ্যিক পণ্যের জোগান। খাদ্য, জল, ওষুধ—প্রতিটি জিনিস এখন সেখানে সোনার চেয়েও দামী। গ্লোবাল হাঙ্গার মনিটর হিসেবে পরিচিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (IPC)’–এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের চরম মুখোমুখি

সংস্থাটির বক্তব্য, “প্রতি পাঁচ জন গাজাবাসীর মধ্যে এক জনেরই কোনও খাবার নেই। অধিকাংশের ঘরে খাবারের শেষ মুঠোটুকু ইতিমধ্যেই ফুরিয়ে গিয়েছে, বাকিরাও বাঁচার জন্য লড়ছেন প্রতিটি কণার জন্য।” বিশেষভাবে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তর গাজা এবং দক্ষিণ রাফা এলাকায়। একদিকে ক্ষুধার জ্বালা, অন্যদিকে ইজ়রায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণ—এই দুই চাপে তলিয়ে যাচ্ছে গোটা অঞ্চল।

IPC-এর রিপোর্ট বলছে, গাজায় ৯৩ শতাংশ মানুষ চরম খাদ্যঘাটতির সম্মুখীন। পুষ্টিহীনতায় ভুগছে হাজার হাজার শিশু। শুধু গত কয়েক সপ্তাহেই কমপক্ষে ৫৭ জন মারা গিয়েছেন অনাহারে—এই সংখ্যাটা এখন আরও বাড়তে পারে। হাসপাতালগুলিও কার্যত দিশেহারা—জ্বালানি নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসকরা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতিতে কাজ করছেন।

গাজায় খাবারের দাম আকাশছোঁয়া। গমের আটার দাম বেড়েছে তিন হাজার শতাংশ! অথচ কাজ নেই, আয় নেই। পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলতে না পেরে দিশেহারা বহু মানুষ একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছেন। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই চরম খাদ্যসঙ্কট থেকে স্থানীয়ভাবে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।

রাষ্ট্রপুঞ্জসহ বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন এই অবরোধকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। জাতিসঙ্ঘের মতে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে কোনও জনগোষ্ঠীকে চাপে রাখা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল। তবুও ইজ়রায়েল সরকারের অবস্থানে টলন নেই। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার জানিয়ে দিয়েছে, হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবেই।

এই যুদ্ধের শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস দক্ষিণ ইজ়রায়েলে হঠাৎ হামলা চালায়। তার পাল্টা জবাবে শুরু হয় ইজ়রায়েলের সামরিক অভিযান। তারপর কেটে গিয়েছে ১৯ মাস, কয়েক দফা যুদ্ধবিরতি হলেও শান্তির কোনও চিহ্ন নেই।

রবিবার আবারও ইজ়রায়েলি সেনার হামলায় গাজায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৩ জনের, যাঁদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৫০ হাজার, আহত লক্ষাধিক। কিন্তু তবুও সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্রটি—ক্ষুধার্ত চোখে ত্রাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের সেই নিঃশব্দ আর্তি, যেটা শুনতে পায় না কোনও যুদ্ধবিমান, আর দেখতে পায় না কোনও রাষ্ট্রের চোখ।

বিরাট কোহলির বিদায়: এক অধ্যায়ের সমাপ্তি, রেখে গেলেন প্রশ্নের রেশ

Read more

Local News